অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে তৈরি করা অ্যাস্ট্রাজেনেকার একটি করোনা টিকা মানবদেহে ৯০ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ট্রায়ালের চূড়ান্ত ফলাফলে গতকাল সোমবার আশাপ্রদ এমন তথ্য জানায় তারা।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি জানায়, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে এ টিকার দুই ধরনের ডোজের তথ্য বিশ্লেষণে একটিতে ৯০ শতাংশ এবং অন্যটিতে ৬২ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গেছে। অর্থাৎ, গড়ে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ টিকা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তবে একটি পূর্ণ ডোজের পর অর্ধেক ডোজ টিকা দিলে তা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে। অন্য একটি টিকায় ৬২ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গিয়েছে। সেই কারণে গড়ে টিকার কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ। ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার কার্যনির্বাহী প্রধান পাস্কাল সরিওট এক বিবৃতিতে জানান, সোমবার (গতকাল) করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক মাইলফলক স্থাপন করেছি। করোনা টিকার কার্যকারিতা প্রমাণ হয়েছে। এটি নিরাপদ ও মানব শরীরে যথেষ্ট কার্যকর। এটি বাজারে এলে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রভাব পড়বে জনস্বাস্থ্যে। অনেকাংশে করোনা প্রকোপ রুখে দেওয়া সম্ভব হবে। ট্রায়ালে সাফল্য পেলেও কত দিনের মধ্যে এই টিকা বাজারে আসতে পারে? এখনও কী কী ধাপ পেরোতে হবে এটি বাজারজাত করার জন্য এমন প্রশ্নে সরিওট বিবৃতিতে জানান, ‘এটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে লক্ষাধিক সংখ্যায় সরবরাহ করা হবে। লাভ নয়, বরং বিভিন্ন দেশের হাতে এই টিকা সহজে পৌঁছে দিতেই ব্যবস্থা নেব। সারা পৃথিবীতে এটি সহজলভ্য করে তোলা আমাদের লক্ষ্য।’
এই ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ নির্মাতা সংস্থার সামপ্রতিকতম সাফল্য করোনা লড়াইয়ে এক নতুন দিক উন্মোচন করল। কারণ, এই টিকার দিকেই তাকিয়ে আছে বিশ্বের বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের দেশগুলি। মডার্না বা অন্য কয়েকটি সংস্থার টিকা তৈরি করতে বা সংরক্ষণ করতে যে ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন, এ ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন নেই। পাশাপাশি, এটি তৈরি করতেও বেশি খরচ নেই। ফলে পিছিয়ে পড়া দেশগুলির হাতে সহজে এই টিকা পৌঁছে দিতে পারবে সংস্থা। তাতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই অনেকটা সহজ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, বিভিন্ন বয়স শ্রেণি, এমনকি বয়স্কদেরও যে এই টিকা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে, পরীক্ষায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিনোলজির অধ্যাপক সারা গিলবার্ট বলেন, কোভিড-১৯ যে বিপর্যয় ডেকে এনেছে, তার অবসানের জন্য এই টিকা ব্যবহারের পথে আমরা আজ (গতকাল সোমবার) আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।