পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে শুনতে হয়েছে যে বাংলাদেশ চীনের বলয়ে চলে যাচ্ছে।
আজ রবিবার (১৩ আগস্ট) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই কংগ্রেস সদস্য রিপাবলিকান দলের রিচ ম্যাককরমিক ও ডেমোক্রেট দলের এড কেইসের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বৈঠক হয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বৈঠকে আলোচনায় ওঠে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “চীন নিয়ে বলেছে যে, “তোমরা চীনের ভেতরে চলে যাচ্ছো’। আমরা বলেছি, জ্বি না। আমরা বলেছি, আমরা চীনের ঋণের ফাঁদেও যাচ্ছি না। চীন থেকে আমরা যে ঋণ নিয়েছি, এটা এক শতাংশ, এটা বড় কিছু নয়।”
কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ভিন্নতার বিষয়গুলো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন বলে জানান কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে আসা মোমেন।
তিনি বলেন, “বলেছি যে, মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমরা অবাধ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। প্রাইভেটাইজেশন আমাদের দেশের মতো অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, কৃষি- এগুলো সব বেসরকারি খাতে। এগুলো সরকারি সেক্টর নয়, কমান্ড সিস্টেমের মতো না।”
বাংলাদেশ চীনের ‘গোলাম’ হয়ে গেছে, এমন ধারণা কংগ্রেস সদস্যদের দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন মোমেন।
তিনি বলেন, “তাদের কাছে বিভিন্ন লোকজন বলেছেন, এরা (বাংলাদেশ) চায়নার খপ্পরে পড়ে গেছে, চায়নার গোলাম হয়ে গেছে। আর এটা একটা ভয়ঙ্কর জায়গা, এখানে ভয়ানক জায়গা, অশান্তি, পুলিশ সব লোকরে ধরে ফেলতেছে, যখন-তখন রাস্তাঘাটে লোক মরতেছে। এই ধরনের একটা ধারণা হয়েছে। ভয় আর কী।”
ভারত ও প্রশান্ত সাগরাঞ্চলকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে আলোচিত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল’ গ্রহণ করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও জোট।
‘চীনবিরোধী’ জোট কোয়াডে বাংলাদেশকে ডাকছে যুক্তরাষ্ট্র্। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনের কাছ থেকে আবার হুঁশিয়ারি এসেছে, বাংলাদেশ সেই জোটে গেলে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ‘ক্ষতি’ হবে।
চীনের আধিপত্য ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি-আইপিএস) তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র। জো বাইডেন সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্রের ওই কৌশলে পরিবর্তনও আনা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের এ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পথ ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), জাপানসহ বিভিন্ন দেশ এর আগে তাদের কৌশলপত্র প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই চায় বাংলাদেশ অন্যান্য আঞ্চলিক দেশের মতো তাদের কৌশলগত জোটে অংশ নিক। ২০১৮ সাল থেকেই দেশটি সে আহ্বান জানিয়ে আসছে।
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশকে টানতে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রচেষ্টা এর আগে দেখা গেলেও সরকার স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।
এমন আহ্বানের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরের ঠিক আগে গত ২৪ এপ্রিল ১৫টি লক্ষ্য ধরে ইন্দো-প্যাসিফিক ‘রূপরেখা’ ঘোষণা করে সরকার।
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল নিয়ে রোববারের বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, “রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। তারা ইন্দো-প্যাফিসিক নিয়ে বলেছে। হ্যাঁ, আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে একটা আউটলুক তৈরি করেছি। এবং আমরা চাই, এটা অত্যন্ত অবাধ, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও নিরাপদ, সবার সমৃদ্ধির জন্য নিয়মনীতিভিত্তিক নৌযান চলাচল।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম উপস্থিত ছিলেন।