নগরীর পাঁচলাইশ থানার মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) প্রসিকিউশনের কক্ষে বিকেলে সাড়ে চারটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আইনজীবীদের সঙ্গে বাবুল আক্তারের বৈঠকের সুযোগ দিয়েছে আদালত।
আজ সোমবার (১৩ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু আদেশ দিয়েছে। আগামী ৯ এপ্রিল আদালত এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রেখেছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পিপি মো. আবদুর রশিদ।
এর আগে দুপুরে একই আদালতে অভিযোগ গঠন বিষয়ে উভয় পক্ষের শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিকেল চারটায় আদেশের জন্য রেখেছিলেন। এ সময় বাবুল আক্তার, আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান মিয়া ও মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিমকে আদালতে হাজির করা হয়। এ মামলার আসামীদের মধ্যে জামিনে থাকা এহতেশামুল হক ভোলা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মহানগর পিপি মো. আবদুর রশিদ বলেন, “দীর্ঘদিন পরিকল্পনা করে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে আসামী বাবুল আক্তার হত্যা করে। বাবুল আক্তার যখন ঢাকায় ছিলেন তখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে ৩০২, ২০১ এবং ১০৯ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মিতুকে হত্যা করার জন্য কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা ও মোতালেব মিয়া ওয়াসিম বিভিন্ন সময় বৈঠক করে। মিতুকে হত্যা করার জন্য কামরুল ইসলাম শিকদার মুছা, এহতেশামুল হক ভোলা ও মোতালেব মিয়া ওয়াসিম পূর্ব থেকে ভাড়া করে ও অস্ত্র সংগ্রহ করে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন প্রধান আসামী বাবুল। পরে মিতু হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তড়িঘড়ি করতে বাবুল আক্তার মামলা করেছিলেন।”
বাবুল আক্তারের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, “আমরা এই মামলার অভিযোগ থেকে বাবুল আক্তারের ডিসচার্জ (অব্যাহতি) চেয়ে আবেদন করেছি। এর পক্ষে আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। আদালত বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) প্রসিকিউশনের রুমে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা আইনজীবীদের সঙ্গে বাবুল আক্তারের বৈঠকের সুযোগ দিয়েছে আদালত৷ অভিযোগ গঠনের বিষয়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলে উচ্চ আদালতে যাব কি না সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাবুল আক্তারকে ফেনী কারাগারে রাখার একটি আবেদন করা হয়েছিল, আদালত আদেশে বিচারের সুবিধার জন্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী চিকিৎসাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।”
আর আগে দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টার দীর্ঘ শুনানিতে বাবুলের আইনজীবী শিশির মনির আদালতে বলেন, “প্রথমত এ ঘটনায় প্রথম মামলাটির বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার নিজে। পরে ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে দ্বিতীয় আরেকটি মামলা করেন। পরে দ্বিতীয় মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। এরপর প্রথম মামলায় অভিযোগপত্র দিল। এ মামলায় অভিযোগ গঠনের জন্য সাফিশিয়েন্ট ডকুমেন্ট নেই।”
আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “মিতু হত্যার পর ২৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তা বর্তমানে মামলার নথিতে নেই কারণ তারা বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। ঘটনার সময় বাবুল ছিলেন ঢাকায়। মুছাকে দিয়ে হত্যা করানোর অভিযোগ আনা হয়েছে, মুছা কোথায়? ১১ জন স্বাক্ষী শুরুতে ২০১৭ সালে আর দ্বিতীয়বার ২০২১ সালে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিলেন। দুটো পরস্পর বিপরীত জবানবন্দি। গায়ত্রী নামের একজনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে স্ত্রী মিতুকে হত্যা করিয়েছেন বলে অভিযোগ। গায়ত্রী কোথায়? তাহলে কীভাবে বিচার করবেন?”
শুনানিতে পিপি মো. আবদুর রশিদ বলেন, “এক ঘটনায় দ্বিতীয় মামলা নিতে পারে কি না আসামী পক্ষ প্রশ্ন তুলেছেন? হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে একাধিক রায় আছে দ্বিতীয় মামলা নিতে পারে। এ মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে প্রথম মামলার ভিত্তিতে। কীভাবে পরিকল্পনা ও টাকা লেনদেন করে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয় তা দীর্ঘ সময়ের তদন্তে বের হয়েছে। আসামীপক্ষ যেসব তথ্য উপস্থাপন করেছে তার বেশিরভাগ ট্রায়ালের বিষয়। এটা বিচারে প্রমাণিত হবে।”
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আসামীদের আদালতে হাজির না করায় অভিযোগ গঠন পিছিয়েছিল। গত ৩১ জানুয়ারি মিতু হত্যায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছা বেগমের আদালত বিচার শুরুর নির্দেশনা দিয়ে তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানোর নির্দেশ দেয়। গত ১১ জানুয়ারি সকালে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবদুল হালিমের আদালত মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ায় বদলি আদেশ দিয়েছিলেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামী করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই অভিযোগপত্র গত ১০ অক্টোবর গ্রহণ করে আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু।