সাতকানিয়ায় ১৮৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

নেমে গেছে বন্যার পানি

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১১ আগস্ট, ২০২৩ at ১১:২৭ অপরাহ্ণ

নেমে গেছে সাতকানিয়ার স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার পানি। সাঙ্গু ও ডলু নদীর পানিও কমে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত চিহ্ন। বন্যায় ১ শত ৮৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

এদিকে, নৌকাডুবি ও স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া আরো ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় এখনো উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা অন্ধকারে। উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে এখনো অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

বন্যাকবলিত এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বন্যার পানি প্রায় সব এলাকা থেকে নেমে গেছে। পানি নেমে গেলেও অধিকাংশ মানুষ ঘরে বসবাস করতে পারছে না। অনেকের বসতঘর ভেঙে গেছে। আবার বেশির ভাগ ঘরে এখনো বন্যার কাদা। কেউ কেউ ঘরে ফিরলেও খাবার তৈরি করতে পারছে না। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া ঘরের চুলা এখনো রান্না করার উপযোগী হয়নি। তাই বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ এখনো খাবার নিয়ে সংকটে রয়েছে।

বেশির ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর দিনযাপন করছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

এদিকে, গত মঙ্গলবার চরতিতে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশু ও বুধবার রাতে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়া ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

তারা হলো দক্ষিণ চরতির মো. সেলিমের মেয়ে সানজিদা (৬), কাঞ্চনা মিয়ার বাড়ির মো. আরিফের ছেলে শহীদুল ইসলাম (৪) ও কালিয়াইশ চৌধুরী বাড়ির মৃত ফজল আহমদের ছেলে তালতল এলাকার ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিচ চৌধুরী (৫০)।

পুরানগড় ইউপি চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল আলম জানান, বন্যার পানি নেমে গেছে। শুধু দু’টি এলাকার কিছু সংখ্যক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। পানি নেমে গেলেও মানুষের কান্না কিছুতেই থামছে না। এলাকার অনেক মানুষের ঘর ভেঙে গেছে। তাদের মধ্যে অনেকের এ মুহূর্তে ঘর বাঁধার সামর্থ্যও নাই। এছাড়া যারা ঘরে ফিরেছে তারাও খাবার নিয়ে সংকটে রয়েছে।

পল্লী বিদ্যুতের কেরানীহাট জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. সাইফুল আলম জানান, লোকজন দিনে-রাতে সমান তালে কাজ করছে। কিছু কিছু এলাকায় ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। বাকি এলাকাগুলোতে লাইন চেক করার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ শুরু করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, কোথাও গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। আবার কোথাও ঘর ভেঙে গেছে। কিছু কিছু বাড়ির মিটার বন্যার পানিতে ভিজে গেছে। এসব চেক না করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে লাইন চেক করে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হবে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, “বন্যার পানি নেমে গেছে। এলাকার অভ্যন্তরীণ সব রাস্তাঘাট ভেসে উঠেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। তবে বন্যাকবলিত এলাকায় এখনো খাবার ও পানি নিয়ে সংকট রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতাও চলছে। বন্যাকবলিত এলাকার জন্য জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ মেট্রিক টন চাউল, নগদ ৫ লক্ষ টাকা, ১ হাজার প্যাকেট সরকারি ত্রাণ, ১ লক্ষ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ৭৫ বান্ডিল ঢেউটিন, ২ লক্ষ টাকা আর্থিক মজুরি বরাদ্দ পেয়েছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেছেন। তিনি প্রয়োজনীয় সকল সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।”

ইউএনও আরো জানান, সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কৃষি, প্রাণীসম্পদ, জনস্বাস্থ্য, মৎস্য, পিআইও। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি অফিসের দেয়া তথ্য মতে এসব খাতে ১শ’ ৮৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় ট্রাক চাপা পড়ে বাঁশখালীর যুবকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চকরিয়া-পেকুয়ার পাঁচ হাজার পরিবারে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা