আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ নেত্রী রওশন এরশাদ।
তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ জানান, দলের ‘পরীক্ষিত’ নেতারা মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনিও ভোটে আসছেন না।
আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হওয়ার আগের দিন বুধবার (২৯ নভেম্বর) রাতে অনুসারীদের নিয়ে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন তিনি।
তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, তাদের ওপর দোষারোপ করাটা ‘ন্যায়সঙ্গত নয়।’
জাতীয় পার্টিতে মনোনয়নে রওশন অনুসারীরা বাদ পড়ে যাওয়ার ঘটনায় বছরের পর বছর ধরে চলে আসা গৃহবিবাদ নতুন করে সামনে চলে আসে।
এর মধ্যে বুধবার রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশানে নিজ বাসায় অনুসারীদের ডাকেন বিরোধীদলীয় নেতা। দুই ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে একটি লিখিত বক্তব্য পড়েন তিনি।
রওশন বলেন, “আমি দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। এবারও নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। বর্তমানে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। বর্তমানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সহযোগিতা না করার কারণে, দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। এমতাবস্থায় দলের ও নেতাদের অবমূল্যায়ন করার কারণে নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত লিখিত বক্তব্যের পর প্রশ্ন করার সুযোগ থাকে। তবে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক কাউকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেননি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রওশন ও জি এম কাদেরের মধ্যে যে টানাপড়েন চলছে তার প্রভাব পড়েছে এবারের মনোনয়নে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী রওশন তার নিজের পাশাপাশি সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গার জন্য রংপুর-১, ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদের জন্য রংপুর-৩, ময়মনসিংহ জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি কে আর ইসলামের জন্য ময়মনসিংহ-৬, রুস্তম আলী ফরাজীর জন্য পিরোজপুর-৩ সহ কয়েকটি আসন চেয়েছিলেন।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ কার্যক্রমে রওশন এরশাদ বা তার অনুসারীদের ডাকাই হয়নি
কিন্তু জি এম কাদের রাঙ্গার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে রাজি নন, তার আসনে প্রার্থী করা হয়েছে জি এম কাদেরের ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারকে। জি এম কাদের নিজে দাঁড়াবেন রংপুর-৩ আসনে। এমনকি ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে চার চারবার সংসদ সদস্য রুস্তম ফরাজীকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
জাতীয় পার্টি সাদ এরশাদকে ময়মনসিংহ-৭ আসন দেওয়ার পক্ষে ছিল যদিও সেই আসনে অন্য একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কে আর ইসলামকে ময়মনসিংহ-৬ আসন দিতে অবশ্য আপত্তি ছিল না। তবে তাকে দুই বছর আগে জি এম কাদের বহিষ্কার করেছেন, সেই আদেশ ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে কি না, সেটি এখনও নিশ্চিত নয়।