কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীস্থ ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ মার্চ দুপুরে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত নাশকতা’ ও ‘উদ্দেশ্য প্রণোদিত’ বলে মনে করে এই বিষয়ে গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।
কমিটির মতে, কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বা এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কোনো ঘটনার জের ধরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটিয়েছে। তবে এই ঘটনায় জড়িত কোনো সন্ত্রাসীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ দুপুরে উখিয়ার বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্পে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ ২ হাজার ৮০৫টি নানা স্থাপনা পুড়ে যায়। এতে ঘরবাড়ি হারা হয় ১৫ হাজার ৯২৫ জন রোহিঙ্গা।
ঘটনাটি তদন্তের জন্য ওইদিন রাতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আজ রবিবার (১২ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৩টায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা হয়। এরপর বিকাল ৪টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে একটি প্রেসব্রিফিংয়ের আয়োজন করে তদন্ত কমিটি।
প্রেস ব্রিফিংকালে এই তদন্ত কমিটির প্রধান ও জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, “ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সাথে আলাপ করে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি। এজন্য মামলা করা জরুরি।”
তিনি বলেন, “ঘটনার দিন আড়াইটার সময় আগুনের সূত্রপাত হয় যা নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের পর অল্প সময়ের মধ্যেই একাধিক স্থানে আগুন লেগে যায়। এটা নাশকতার প্রমাণ বহন করে।”
তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গারা ঘটনার দিন আগুন নেভাতে গেলে কৌশলে তাদের বারণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, ‘আগুন নেভানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরি’।”
তিনি বলেন, “চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ হিসাবে মোট ৭৪ পৃষ্ঠার সংযুক্তি রয়েছে। তদন্তকালে অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করেছে তদন্ত কমিটি। রোহিঙ্গারা ঘটনাটিকে পরিকল্পিত নাশকতা হিসাবে অভিহিত করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের তথ্যে ভিন্ন ভিন্ন নাম আসায় তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “নাশকতাকারীদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার পর তদন্ত করে তাদের শনাক্ত করার পক্ষে মতামত দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া ঘটনার পূনরাবৃত্তি রোধে নিয়মিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চিরুনী অভিযান চালানো এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো সহ মোট ১০টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।”
সুপারিশসমূহের মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করে তৈরি করা, ব্লকের রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরি, শেল্টারে তেরপলের মতো অতি দাহ্য পদার্থের পরিবর্তে কম দাহ্য পদার্থের তৈরি পণ্য ব্যবহার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যেখানে সেখঅনে দোকানপাট নির্মাণ বন্ধ করা ইত্যাদি।
প্রেস ব্রিফিংকালে তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৯ হাজারের বেশি বসতবাড়ি পুড়ে যায়। এসময় ১১ জন রোহিঙ্গা আগুনে পুড়ে মারা যায় এবং আহত হয় আরো ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা।












