রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটায় সংঘবদ্ধ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের অতর্কিত হামলায় গুলিবিদ্ধ একজনের মৃত্যু সহ ৫ জন গুরুতর জখম হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সরফভাটা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এজাহার মিয়া ফকিরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া যুবকের নাম মো. মোজাহেদ (২৮)। তিনি ওই এলাকার মো. হারুনের ছেলে।
তিনি গুলিবিদ্ধ হলে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া ধারালো দেশীয় অস্ত্রের কোপে আহত হয়েছেন একই এলাকার মৃত কেরামত আলীর ছেলে আবু তাহের (৩৫), বাদশা মিয়ার ছেলে মো. ফয়জুল্লাহ (২৫), মো. ইব্রাহীমের ছেলে মো. ফরহাদ (১৯), আবদুর রশিদের ছেলে মো. জামাল (২৫) এবং খায়ের আহাম্মদের ছেলে জালাল উদ্দীন (৩০)।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আহতরা সবাই দিনমজুর। তারাসহ এলাকার সবাই স্থানীয় একটি দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এসময় ৩০/৪০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল অস্ত্র, লাঠিসোটা, ধারালো রাম দা ও ছুরিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা চালায়।
তারা প্রথমে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় এবং অন্তত ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরবর্তীতে নিহত মোজাহেদের ঘরে গিয়ে তার বড় ভাই দিদারকে খুঁজে না পেয়ে তাকে গুলি করে। এরপর স্থানীয় হাছানের চায়ের দোকানটিতে প্রবেশ করে সবার মোবাইল ফোন চেক করতে চায় এবং দিদারকে খোঁজ করে। পরক্ষণেই এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে শুরু করে।
এসময় দোকানে বসে থাকা ৫ জন গুরুতর আহত হয়। তারা চলে গেলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
কী কারণে এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে তা কেউ জানাতে পারেননি। তবে গুলিবিদ্ধ মোজাহেদের বড় ভাইয়ের সাথে এসব সন্ত্রাসীদের পূর্বশত্রুতা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে খুঁজতে এসেই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সকলে।
এই ব্যাপারে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মো. মঞ্জু বলেন, “তারা প্রথমে এসে মায়ের সামনে ছেলে মোজাহেদকে গুলি করে। এরপর দোকানে গিয়ে কুপিয়ে আরও ৫ জনকে গুরুতর আহত করে। বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং দোকান থেকেও নগদ টাকা ছিনতাই করে ভাঙচুর চালায়। নিহত মোজাহেদ ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান। মাত্র ৭ মাস আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগেও গাছ কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ শেষে তিনি বাড়ি ফিরেছিলেন। এখনও দোকানটি পুরো রক্তাক্ত। এলাকার প্রতিটি ঘরে আতংক বিরাজ করছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক আবদুল মান্নান বলেন, “তাদেরকে এক এক করে সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে আনা হচ্ছিল। তাদের কারো হাতে, কারো পায়ে এবং কারো মাথায় ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত ছিল। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দুটো এম্বুল্যান্সে করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তবে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে এখানে আনা হয়নি। তাকে সরাসরি চমেক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।”
এই ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুব মিলকী বলেন, “হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এলাকার পরিবেশ শান্ত রয়েছে। কারা, কী কারণে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে, এই ঘটনায় এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। পাহাড়ে অবস্থান নেয়া চিহ্নিত সন্ত্রাসী একটি গ্রুপ এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে এলাকা ছেড়ে ইতিপূর্বে অন্তত দেড় শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর হত্যা, ডাকাতি, মারামারিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
হামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “যারা হামলা চালিয়েছে তারা সবাই চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাদের দমন করতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়নি। তাদের দমন করে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।”
পূর্বশত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটতে পারে বলে তার ধারণা।