পার্বত্য জেলা রাঙামাটির স্থানীয় বাজারগুলো এখন আনারসের গন্ধে মৌ মৌ করছে। পাহাড়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আনারস উৎপাদিত হয় রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায়। এ কারণে নানিয়ারচরকে বলা হয় আনারসের রাজধানী।
প্রতিদিন রাঙামাটি শহরের বনরূপা সমতাঘাট, তবলছড়ি, রিজার্ভ বাজার ও ট্রাক টার্মিনাল এলাকার শত শত বোটে করে আনারস আসছে।অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলন ভালো হওয়ায় এখানকার ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিনই ট্রাকে করে আনারস যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
এদিকে, শহরের বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে ছোট আকারের প্রতি জোড়া আনারস বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকা আর বড় আকারের জোড়া প্রতি আনারস বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা।
অন্যদিকে, খুচরা বাজারে জোড়া প্রতি ছোট আকারের আনরস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। আর বড় আকারের প্রতি জোড়া আনারস বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা।
আনারসের বর্তমান বাজারের দামের কারণে হতাশ আনারস চাষীরা। সঠিকভাবে দাম পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন রাঙামাটির বিভিন্ন বাজারের আনারস চাষীরা।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাঙামাটি জেলায় ২,২৪৫ হেক্টর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু নতুন বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। আনারসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২,১০০ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে প্রতি হেক্টরে ২৫ মেট্রিক টন করে আনারস পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আনারস চাষী সুজয় চাকমা বলেন, “আমি নানিয়ারচর থেকে আনারস নিয়ে আসছি। অন্যান্য সময় তো আনারস বিক্রি করে ভালো লাভ হতো কিন্তু এবার আনারসের দাম কম।”
নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের আরেক কৃষক চাউপ্রু রোয়াজা বলেন, “গতবারের চেয়ে এবার আনারসের ফলন ভালো হয়েছে।আমার নিজ বাগান থেকে আনারস শহরের বনরূপায় বিক্রি করতে এনেছি। আশা করি গতবারের চেয়ে লাভ ভালো হবে।”
স্থানীয় আনারস ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, “এবার বাজারে আনারসের দাম বেশি। আনারস বিক্রি করে লাভ তেমন হবে না।”
আরেক পাইকারি আনারস ব্যবসায়ী মো. মিজান বলেন, “গত দুই বছর তো করোনার জন্য আনারস বিক্রি করে লাভ হয়নি। এবার আশা করছি আনারসের ফলনও ভালো হওয়ায় চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়ে লাভ করতে পারব।”
চট্টগ্রামের আনারস ব্যবসায়ী বাবলু বলেন, “এবার আনারসের বাজার দর মোটামুটি সীমার মধ্যে আছে। রাঙামাটির নানিয়ারচরের আনারসের চাহিদা আছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেহেতু এখানকার আনারস খেতে খুবই মিষ্টি।”
রাঙামাটির লংগদুর আনারস চাষী অমর জীবন চাকমা বলেন, “এবার আনারসের দাম একটু কম। পাইকারি বাজারে ছোট আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৭-৮ টাকায় আর বড় আকারের আনারস ৯-১০ টাকায়।”
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, “রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা হচ্ছে আনারসের জন্য বিখ্যাত। এই উপজেলার পাশাপাশি সদর এবং বরকলেও আনারসের উৎপাদন হয়ে থাকে। এখন বাজারে যে আনারসটি পাওয়া যাচ্ছে সেটি হচ্ছে হানিকুইন জাতের আনারস। এটি আকারে ছোট হলেও বেশ রসালো আনারস।”
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যেসব কৃষিপণ্য পচনশীল হয় সেগুলো কৃষকদের মজুদ রাখার সুযোগ নাই। এসব পণ্যগুলো তাদেরকে যেকোনো অবস্থায় বিক্রি করে দিতে হয়।”
তপন কুমার পাল জানান, কখনও কখনও কৃষকরা আশানুরুপ মূল্য পায় না। কৃষি উৎপাদনকারীর সাথে যদি বিপণনকারীর সুসম্পর্ক থাকে তাহলে কৃষক সেখানে আরো বাড়তি মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
ছবি- রাঙামাটি শহরের বনরুপা সমতাঘাট এলাকায় আনারসের বিকিকিনি।