ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশী, ঈদ মানে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে আনন্দ উচ্ছাসে মেতে ওঠা।
কিন্তু সবার ভাগ্যে কি পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করার সেই সুযোগ হয়ে ওঠে? জীবন জীবিকার তাগিদে নিজ পরিবার থেকে অনেক দূরে এসে রাঙামাটিতে আগত পর্যটকদের সেবার মাধ্যমে নিজের স্ত্রী, সন্তানকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট ভুলে থাকতে চান রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলের কর্মীরা।
রাঙামাটি শহরের কাঁঠালতলী এলাকার হোটেল সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল-এর কর্মরত হোটেল বয় আলম বলেন, “দুই বছর পর ঈদে একটানা ১০ দিনের ছুটি থাকাতে রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটক আসছেন। টুরিস্টদের শতভাগ সেবা দেয়ার জন্য আমরা এবার ঈদে বাড়িতে যেতে পারিনি। পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকলেও অনেকদিন পর পর্যটকদের চাপ বেড়েছে। এতেই আমার আনন্দ।”
পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলায় বাড়ি হোটেল সাংহাইয়ের হোটেল বয় জাহিদুল ইসলামের।
তিনি এ প্রতিদেককে বলেন, “আমি নিজে বাড়িতে ঈদ করতে না পারলেও আমার মা-বাবা, ভাইদের জন্য টাকা পাঠিয়েছি যাতে তারা ঈদের আনন্দটাকে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারে।”
তিনি বলেন, “যেহেতু এই হোটেলের চাকরিই হচ্ছে আমার একমাত্র আয়ের উৎস সেহেতু এখানকার পর্যটকদের সেবা দেয়াই এখন আমার কাছে ঈদের খুশী।”
শহরের বনরুপায় অবস্থিত হোটেল নীডস হিল ভিউর রাসেল বলেন, “প্রত্যেকটা মানুষ চায় এত বড় উৎসবের দিনে নিজের একান্ত আপনজন ও কাছের মানুষের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। কিন্তু পর্যটকদের সেবা দেয়াই আমাদের কাজ। এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ তৃপ্তি দেয়াই আমাদের লক্ষ্য।”
রাঙামাটি শহরের ফিশারি সংলগ্ন হোটেল হিল আ্যাম্বাসেডরের শাওন বলেন, “আজকে যেহেতু ঈদ, ঈদের ছুটি সবাই কাটাচ্ছে কিন্তু আমরা এখানে এসেছি জীবিকার তাগিদে। যেহেতু এটা একটি হসপিটালিটি প্রতিষ্ঠান তাই এখানে অনেক পর্যটক আসেন আমাদের থেকে সেবা নিতে। তাদেরকে সেবা দিয়েই ঈদের আনন্দ উদযাপন করছি সবার সাথে।”
হোটেল হিল আ্যাম্বাসেডরের ডেস্ক ইনচার্জ মামুন বলেন, “আমার এখান থেকে পরিবার অনেক দূরে আছে। তাদের সাথে পবিত্র ঈদ উদযাপন করতে পারছি না। আমাদের পরিবারের সকলে ভালো থাকার জন্য কর্মস্থলে আছি জীবিকার তাগিদে। এরপরও পর্যটকদের সেবায় আমরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছি।”
এ প্রসঙ্গে রাঙামাটির হোটেল সাংহাই ইন্টাররন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বিষয়টি খুবই কষ্টের এবং আনন্দের। আমরা প্রত্যেকটা মানুষই মানুষের জন্য। কেউ আনন্দ উপভোগ করেন আর কেউ আনন্দ দিয়ে থাকেন।”
তিনি বলেন, “পর্যটন ব্যবসা এমনই যে বিভিন্ন সরকারি ও ধর্মীয় উৎসবের ছুটিতে এখানে পর্যটকের সমাগম হয়। এর জন্য হোটেলের সকল কর্মচারীদের উপস্থিত থাকতে হয়। পরিবারের সাথে ঈদ করতে সকলেই চাই কিন্তু আমাদেরকে বাস্তবতা মেনে নিতে হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য। সর্বোপরি আমরা রাঙামাটির বাহির থেকে আগত পর্যটকদের সেবা দিতে পারলেই সন্তুষ্ট থাকি।”