রামুতে ‘৯৯৯’ ফোন করেও ঠেকানো গেল না গরু লুট

সকালে মিলেছে যুবকের মরদেহ

রামু প্রতিনিধি | বুধবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ১:৫২ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামুতে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের গরু লুট ঠেকাতে ফোন করা হয়েছিল ‘৯৯৯’ নম্বরে। ঘটনাস্থল থেকে থানার দূরত্ব এক কিলোমিটার হলেও পুলিশ পৌঁছাতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। ততক্ষণে মালিকসহ গ্রামবাসীকে গুলি ছুঁড়ে ২টি গরু লুট করে নিয়ে যায় ডাকাত দল। আর সকালে ঘটনাস্থলের পাশেই মিলেছে এক যুবকের মরদেহ।

গরুর মালিক সহ গ্রামবাসীর দাবি ডাকাতরা পিটিয়ে হত্যা করেছে এ যুবককে। আর পুলিশ বলছে, গরু ডাকাতি আর মরদেহ উদ্ধার ভিন্ন ঘটনা।

আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসেরচর চরপাড়া এলাকার এক সবজি ক্ষেতে মীর কাশেম (৩২) নামের এ যুবকের মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়া হয়। মীর কাশেম ওই এলাকার মৃত নিয়ামত আলীর ছেলে।

অফিসের চর চরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, গতকাল মঙ্গলবার দিনগত রাত ৩টার দিকে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল তার গোয়ালঘরে থাকা ৭টি গরু নিয়ে যায়। তার মেয়ে রাতে দেখতে পান গোয়ালঘর খালি। এসময় বাড়িতে থাকা জামাতা ফারুকসহ পরিবারের সদস্যরা ছুটোছুটি শুরু করে। প্রধান সড়কে গিয়ে দেখতে পান ডাকাত দল ৭টি গরু গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে। এসময় তারা লুট করা গরুগুলো ডাকাতদলের কবল থেকে কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। তখন ডাকাতদল ফারুককে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পান ফারুক।

ঘটনার পর থেকে তার ভাতিজা মীর কাশেম নিখোঁজ ছিল। সকালে স্থানীয়রা মীর কাশেমের মরদেহ পাশের সবজি ক্ষেতে দেখতে পান। রাতে ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলায় ডাকাতরা তাকে শারীরিক নির্যাতন চালায় এবং হত্যার পর হাত-পা-মুখ বেঁধে সেখানে ফেলে যায়।

তিনি জানান, মীর কাশেমের মরদেহের দুই হাত পেছনে, মুখ, চোখ, এবং পা জোড়া বাধা অবস্থায় পাওয়া যায়।

সকালে রামু থানার ওসি (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে।

গৃহকর্তার ছেলে তারেক ও মেয়ে শামীমা আকতার জানান, ডাকাতি চলাকালে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তা চাইলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে ১ ঘণ্টারও বেশি পরে। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। দেরিতে আসার পরও পুলিশের এক কর্মকর্তা ৯৯৯ নম্বরে কল করায় বাড়ির সদস্যদের বকাঝকা করেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “চুরি হলে আমরা কী করব? ডাকাতি হলে আসতাম।”

এসময় স্কুলছাত্রী শামীমাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- তুমি ক্লাস নাইনে পড়, নাইন বানান জানো? তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম তারা জানাতে পারেননি।

সকাল ১০টায় থানায় যোগাযোগ করতে বলেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর আলম জানান, রাতে গরু ডাকাতির সময় মীর কাশেম দেখে ফেলে। মীর কাশেম মানসিক ভারসাম্যহীন। সে অপরিচিত লোকজন দেখলে চিল্লাচিল্লি করে। তাছাড়া গভীর রাতে হওয়ায় সে হয়তো চিৎকার দিতে চেয়েছিল। এজন্য ডাকাতরা তাকে মারধর এবং হাত-পা-মুখ বেধে হত্যা করেছে।

মোহাম্মদ আলীর জামাতা ফারুক জানান, গরুগুলো গাড়িতে তোলার সময় দু’জন ডাকাত তাকে মারধর শুরু করে এবং তাকেও বেধে রাখার চেষ্টা চালায়। এসময় তিনি একজনকে ধরে রাখলে আরো ৪ জন ডাকাত এসে তাকে মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরে বড় আকারের দু’টি গরু নিয়ে ডাকাতদল গাড়িযোগে সটকে পড়ে।

রামু থানার পরির্দশক (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান, যে মারা গেছে সে মানসিক রোগী। গরু ডাকাতি হয়েছে রাতে, আর তার মরদেহ পাওয়া গেছে সকালে। দুইটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।

আর ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করার সত্যতা স্বীকার করে ওসি জানান, ৯৯৯ নম্বরে ফোন পাওয়ার আগেই পুলিশ গরু লুট ঠেকাতে তৎপরতা তৎপরতা শুরু করে। আর পুলিশ কাউকে বকাঝকা করার বিষয়টি সত্য হতে পারে না। কেননা পুলিশ সদস্যের পোষাকে ক্যামেরা সংযুক্ত ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে ১৭ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ১৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
পরবর্তী নিবন্ধকালুরঘাটে বাসের ধাক্কায় বাইসাইকেল আরোহীর মৃত্যু