কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়, তবে কখনো আক্রমণ হলে বাংলাদেশ নিজেদের রক্ষা করার উপযোগী করে সব বাহিনীকে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ সোমবার (২০ মার্চ) বেলা ২টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামায় ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নামের সাবমেরিন ঘাঁটির উদ্বোধন করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিতে নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ঘাঁটির অধিনায়ক মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন। নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে ঘাঁটিটি নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্রসীমায় কীভাবে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করা যায় সেটি আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরই পদক্ষেপ নিই। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়াসহ কেউ এই সমুদ্রসীমায় রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই সমুদ্রসীমা রক্ষার পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১-এর মধ্যে সমুদ্রসীমা রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”
শেখ হাসিনা বলেন, “২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। পরে যখন ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসি তখন জাতির পিতার পরিকল্পনা মাফিক আমরা এগিয়ে যাই। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে জটিলতা সেটি নিরসনে পদক্ষেপ নিই। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমার ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখি।”
২০১৭ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হয় চীনের তৈরি ২টি সাবমেরিন। গত ৫ বছর সাবমেরিন ২টি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ঈসা খাঁ নৌ ঘাঁটিতে ছিল। ২০২১ সালে কক্সবাজারের পেকুয়ায় শুরু হয় আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন নৌঘাঁটির নির্মাণ কাজ।
নৌবাহিনী এখন স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ কারও সঙ্গে যুদ্ধ চায় না তবে কখনো আক্রমণ আসলে নিজেদের রক্ষা করার উপযোগী করে সব বাহিনীকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। সমুদ্র সম্পদ অর্থনীতিতে কাজে লাগাতে এবং ব্লু ইকোনমি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে কাজ করছে সরকার।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি আধুনিক শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ বিশেষায়িত ঘাঁটি সংযোজিত হয়েছে। এতে নৌবাহিনী স্মার্ট বাহিনীতে রূপান্তর হয়েছে।”
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ঘাঁটিতে ভিডিও টেলিকনফারেন্সে সংযুক্ত হলে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল তাঁকে স্বাগত জানান।
এ সময় সাবমেরিনারদের একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অভ অনার প্রদান করে। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা নৌ কমান্ডোরা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ সাবমেরিন নৌঘাঁটির ফলক উম্মোচন ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে মগনামায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা প্রমুখ।