তিন দফা দাবিতে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে পেট্রোল পাম্প মালিকদের একাংশের সংগঠন পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
রবিবার (৩ সেপ্টেম্বর) থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের ঘোষণায় অনড় রয়েছে তারা।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান রতন বলেন, “আমাদের দাবিগুলো না মানলে তেল উত্তোলন বন্ধ রাখব।”
জ্বালানি তেল বিক্রির ওপর প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা, জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকলরির অর্থনৈতিক জীবনকাল ৫০ বছর করা এবং জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীদের কমিশন এজেন্ট হিসেবে গেজেট প্রকাশের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয় পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
মিজানুর রহমান বলেন, “তিন দফা দাবির বিষয়ে শনিবার জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। তবে সেখানে মূল দাবি- কমিশন বাড়ানোর বিষয়ে কোনো ঘোষণা নেই।”
রাতে প্রজ্ঞাপন হাতে পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ঘোষিত কর্মসূচি রবিবার থেকে চলবে। আগামীকাল এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ধর্মঘটের দাবিতে সারা দেশে সব মালিক তাদের সংগঠনের সঙ্গে আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেউ কেউ আমাদের সংগঠনের বাইরেও আছেন।”
জ্বালানি তেল বিপণনে সরকার ও বিপিসি’র অনুমতিপ্রাপ্ত জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী এবং ডিলারদের কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সরকার নিম্নোক্ত শর্তে নতুন ফিলিং স্টেশন/সার্ভিস স্টেশন সংক্রান্ত নীতিমালা (সংশোধিত), ২০১৪ অনুযায়ী এবং জ্বালানি তেল বিপণনে সরকার/বিপিসি কর্তৃক অনুমতিপ্রাপ্ত জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী/ডিলারদের কমিশন এজেন্ট ঘোষণা করল। শর্তগুলো হলো-
১. জ্বালানি তেলের ক্রয়মূল্য এবং বিক্রয়মূল্য সরকার/বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কর্তৃক নির্ধারিত হবে। জ্বালানি তেলের কমিশন এজেন্ট শুধু সরকার/বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)/জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানি কর্তৃক সরবরাহকৃত জ্বালানি তেল বিক্রয় করার জন্য নির্ধারিত কমিশন ভোগ করবে।
২. জ্বালানি তেলের কমিশন এজেন্টরা তেল বিপণন কোম্পানির কাছে তেলের মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে জ্বালানি তেল গ্রহণ করে শুধু গ্রাহকের কাছে বিক্রয়/সরবরাহ করবে। এর দ্বারা কমিশন এজেন্টরা বিপণন কোম্পানির মালিকানা বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোনো অংশীদার বিবেচিত হবে না।
৩. জ্বালানি তেলের কমিশন এজেন্টরা জ্বালানি তেল বিপণনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এবং জ্বালানি তেল বিপণন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক/নির্দেশনা অনুসারে বিপণন/সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
৪. কমিশন এজেন্টদের জন্য জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনাসহ দেশে প্রচলিত যাবতীয় আইন, বিধিবিধান এবং নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। তবে দেশে প্রচলিত কোনো আইন, বিধিবিধান এ প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিবিধান প্রাধান্য পাবে।
অন্যদিকে, দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে পাম্পে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার ঘোষণা দিয়েছে পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতি।
শনিবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হকের নেতৃত্বে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ, মহাসচিব জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব মীর আহসান উদ্দিন পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক জায়েদ আহমেদ তপনসহ বাংলাদেশ ট্যাংক লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্যাংকলরি শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের উপস্থিতিতে গত ২৯ তারিখ বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে পেট্রোল পাম্প মালিকদের সব দাবি দাওয়া বাস্তবায়নে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পেট্রল পাম্প মালিকদের সকল প্রকার দাবি-দাওয়া পূরণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আশ্বস্ত করা হয়। ওই সময়ের মধ্যে সব ডিপো থেকে তেল উত্তোলন স্বাভাবিক রাখার জন্য সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে খুলনার খালিশপুরে ট্যাংকলরি ভবনে সভা করে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো, বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতি, খুলনা বিভাগীয় ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়ন এবং পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ট্যাংকলরি শ্রমিক কল্যাণ সমিতি।
সভায় মালিক সমিতির নেতারা জানান, জ্বালানি তেল বিক্রিতে কমিশন বৃদ্ধিসহ ৩ দফা দাবি পূরণে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু এই সময় পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।