গভীর রাতে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে প্রসূতিকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন ওসি

পেকুয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৪ মে, ২০২৩ at ১১:০২ অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র কারণে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের রাজাখালী এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন বামুলাপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আরকানের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা জয়নব বেগম (১৯) কিন্তু রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ প্রসব বেদনা শুরু হয় তার।

এসময় তাকে ১০ কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য কোনো পরিবহন পাওয়া যাচ্ছিল না।

খবর পেয়ে গভীর রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার।

তার গাড়িতে করে প্রসূতি জয়নব বেগমকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তিনি। সেখানেই ভোরে জয়নব এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। নবজাতকের জন্মের পর জয়নব বেগম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ওসি স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। স্যার না থাকলে আমার কী অবস্থা হতো, জানি না।”

আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র প্রভাব শুরু হওয়ার পর গতকাল শনিবার রাত নয়টার দিকে আশ্রয়কেন্দ্রে যান জয়নব বেগম। রাত দেড়টার দিকে তার প্রসববেদনা শুরু হয়। এসময় উপকূলীয় এলাকা রাজাখালীতে কোনো গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে পেকুয়া থানার ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার নিজের গাড়িতে করে ১০ কিলোমিটার দূরে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান জয়নবকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, “ওই নারী স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্ম দিয়েছেন। মা ও ছেলে দু’জনই সুস্থ আছে।”

থানা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহিউদ্দিন মাজেদ চৌধুরী বলেন, “প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র মাঝেও পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ প্রসূতীর নরমাল ডেলিভারি হয়। তাদের মধ্যে জয়নব বেগমকে গভীর রাতে একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পেকুয়া থানার ওসি সাহেব হাসপাতালে ভর্তি করান।”

হাসপাতাল সূত্র জানায়, আজ রবিবার (১৪ মে) সকাল ১০টার দিকে জয়নব বেগম সন্তানকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যান।

আশ্রয়কেন্দ্রের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে জয়নব অবস্থান করছিলেন। সদ্যোজাত বাচ্চাটি দেখতে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

জয়নবের স্বামী মোহাম্মদ আরকান বলেন, “ঘূর্ণিঝড় মোখা’র নামানুসারে আমার ছেলের ডাকনাম ‘মোখা’ রাখা হয়েছে।”

ওসি মোহাম্মদ ওমর হায়দার জানান, গতকাল সারাদিন ও রাতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে ও আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে তারা কাজ করেছেন। রাতে একটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করার সময় এয়ার আলী খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় নামের আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে খবর পান এক নারী প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছেন। রাত দেড়টায় সেখানে গাড়ি পাওয়া যাবে না। তাই তিনি গাড়ি নিয়ে সেখানে পৌঁছে ওই নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে ওই নারী সন্তান জন্ম দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ২ জনের অবস্থা আশংকাজনক
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের সিরিজ জয়