ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়েছে পেকুয়া উপজেলার সব-ক’টি ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার ঘরবাড়ি। এখনো পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন পুরো উপজেলা। আগামী আরো ২ দিন বিদ্যুৎ থাকবে না বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ অফিস।
স্মরণকালের এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার সদর ইউনিয়ন, মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়ন।
আধা ঘণ্টার তাণ্ডবে প্রায় পাঁচ হাজার ছোট-বড় গাছ ভেঙে পড়েছে।
আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পেকুয়া সদরের গোয়াখালী, সিরাদিয়া, বটতলিয়া পাড়া, দিয়া পাড়া, সিকদারপাড়াসহ উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় গ্রামে কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে। কারো কারো টিনের চালা উড়ে গেছে, সড়কে পড়ে আছে বড় বড় গাছ আর কোথাও কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে আছে। সড়কের গাছ অপসারণের কাজ করছেন স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস, থানা পুলিশ ও সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকগণ। তদারকি করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা। উপজেলার সব ক’টি ইউনিয়নের চিত্র এইরকম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
পেকুয়া সদর গোয়াখালী বটতলিয়া পাড়ার বাসিন্দা আবু ছিদ্দিক বলেন, “হঠাৎ করে আসা উত্তরের বাতাস মুহূর্তের মধ্যে আমার ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে যায়। ফলে ঘরের জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
একই এলাকার ছমি উদ্দিন বলেন, “কিছুদিন আগের বন্যায় আমার ঘর কিছুটা ভেঙেছিল। তারপও কোনো মতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম কিন্ত গতকালের ঘূর্ণিঝড়ে আমার সব শেষ হয়ে গেলো।”
মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে মগনামা ইউনিয়নে ১২১টি বসতঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, ৩৯২টি ঘর মাঝারি ক্ষতিগ্রস্ত ও তিন হাজারের অধিক গাছপালা ভেঙে গেছে। বিদ্যুৎ লাইনেরও বেশ ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে ৬শ’ ঘরবাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত ও ৮শ’ ঘরবাড়ি মাঝারি ক্ষতিগ্রস্ত বলে এই পর্যন্ত খবর পেয়েছি। তবে এই ঝড়ে পেকুয়া উপজেলার বিশ হাজারের মতো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত কাজ করছেন বলে জানান।
পেকুয়া পল্লী বিদ্যুৎ সাব জোনাল অফিসের এজিএম দিপেন চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পেকুয়ায় মেইন লাইনে ৫৭টি খুঁটি সহ মোট ১২৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন দিনরাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পেকুয়া এখন বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে।”
তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন এবং এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো দুই-তিন দিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূর্বিতা চাকমা বলেন, “ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে পেকুয়া উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নে কম-বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, বিদ্যুৎ খুঁটি উপড়ে পড়েছে, কয়েক হাজার গাছ পালা ভেঙে গেছে।”
তিনি কোথাও কোথাও গাছ পড়ে সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান।