আহমদিয়া জলসা বন্ধের দাবিতে পঞ্চগড় রণক্ষেত্র

ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

আজাদী অনলাইন | শুক্রবার , ৩ মার্চ, ২০২৩ at ১০:২৫ অপরাহ্ণ

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দিনভর কয়েকশ’ লোকের সংঘর্ষ হয়েছে পুলিশের সঙ্গে।

এ সময় ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট ভাঙচুর ছাড়াও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার (৩ মার্চ) জুমার নামাজের পর তারা মিছিল নিয়ে পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এলে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় বলে জানান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়া।

এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয় বলে সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

আজ রাতে বিজিবি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, “পঞ্চগড়ে আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভের ঘটনায় সংঘর্ষ; উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।”

আজ শুক্রবার থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত তিন দিন শহরের উপকণ্ঠে আহমদনগরে এ জলসার আয়োজন করেছিল আহমদিয়া সম্প্রদায়। তার আগেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা।

এ সময় এক তরুণের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাতে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, “একজনের মারা যাওয়ার খবর আমরা পেয়েছি। তবে কী কারণে মারা গেল তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। ময়নাতদন্তের পরই মারা যাওয়ার কারণ বলা যাবে। শহরের পরিস্থতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।”

নিহত তরুণের নাম আরিফুর রহমান (২৭) বলে জানা গেছে। মাথায় আঘাত পেয়ে মারাত্মক জখম হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

এর আগে সন্ধ্যায় সদর থানার ওসি আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, “আহমদনগরে কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার কথা শুনেছি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এছাড়া সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও র‌্যাব রয়েছে।”

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ও রাতে কয়েকটি সংগঠন জেলা শহরে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে আহমদিয়াদের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সালানা জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলগুলো শহরের তেঁতুলিয়া সড়কের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বড় পরিসরে চৌরঙ্গী মোড়ের দিকে আসে।

এই মিছিলকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ মিছিলের আশপাশে ছিল কিন্তু আকস্মিকভাবে মিছিল থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়।

এ নিয়ে পুলিশ ও মিছিলকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে বলে জানান ওসি লতিফ মিয়া।

এতে তিন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “মিছিলকারীরা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করলে সেটি ভস্মীভূত হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীদের হামলায় পুলিশ ও বিজিবি’র গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েকটি কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় পঞ্চগড় বাজার এলাকায় একটি মার্কেটে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। পরে সেসব দোকান থেকে মালপত্র বের করে রাস্তায় পুড়িয়ে দেয়া হয়।

আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরে সাধারণ মানুষের চলাচল কমে গেছে। শহরে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিকে টহল দিতে দেখা গেছে। বিভিন্ন রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে আছেন।

দিনভর সংঘর্ষের ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসএ টিভির পঞ্চগড় প্রতিনিধি কামরুজ্জামান টুটুল, দৈনিক করতোয়ার সাংবাদিক সামসউদ্দিন চৌধুরী কালামসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

বিকালের দিকে শহরের উপকণ্ঠ আহমদিয়া নগরে কয়েকটি বাড়িঘরে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।

স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল রহিম বলেন, “এলাকাটিতে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অনেকেই বসবাস করেন। সেখানকার ১০টির বেশি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকা থেকে অনেকেই পরিবার নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশ সেখানে টহল দিচ্ছে। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।”

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আহমদিয়া সম্প্রদায় তাদের সালানা জলসা বন্ধ ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম শাখার আহ্বায়ক মাহমুদ আহমেদ সুমন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামুতে হত্যা মামলার আসামীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় আগুনে পুড়েছে ৩ বসতঘর, অঙ্গার তিনটি গরু