মিউজিক অ্যান্ড মি

নাজমুস সাকিব রহমান | সোমবার , ৫ এপ্রিল, ২০২১ at ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

‘Grab a song and come along
You can sing your melody
In your mind you will find
A world of sweet Harmony’

Music and me; sung by Michael Jackson

২.
মিউজিক অ্যান্ড মি (১৯৭৩)। মাইকেল জোসেফ জ্যাকসনের এই অ্যালবামটা অনেকবার শুনেছি (হ্যাঁ, উনার আসল নাম এটাই)। শুনতে হয় বলে শুনেছি এরকম না। খুঁজে বের করে শোনা। এটা মাইকেলের থার্ড সলো অ্যালবাম। এর ভেতর দশটা গান আছে। গানগুলা যখন বানানো হচ্ছিল, তখন গায়কের বয়স চৌদ্দ বছর। মাইকেল ছিলেন চাইল্ড আর্টিস্ট। গান করা শুরু করেছিলেন পাঁচ বছর বয়সে।
‘মিউজিক অ্যান্ড মি’র গানগুলো তৈরির সময় মাইকেল জানতেন না, একদিন থ্রিলার (১৯৮২) নামে একটা অ্যালবাম হবে তার। এরপর পৃথিবী তার দিকে ঘুরে যাবে। পপ জিনিসটা তার ইশারায় উঠবে-বসবে। এমটিভির উদয় হবে। মিউজিক কানে ধরে দাঁড়াবে। কিন্তু এসব তো তখনো ভবিষ্যত। পিঁপড়া ছাড়া কেউ ভাবতে পারেনি।
মাইকেলের শুরুটা অবশ্য ‘জ্যাকসন ফাইভ’ দিয়ে। ভাইদের ব্যান্ডে গাইতেন তিনি। ছোট্ট শরীর দোলাতেন। দলের একজন হওয়ার চেষ্টা করতেন। এটা খুবই ইন্টারেস্টিং যে মাইকেলের সলো ক্যারিয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সম্পর্ক আছে। তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৭১ সালে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বছর। বলা যায়, বাংলাদেশ আর মাইকেল একইসঙ্গে স্ট্রাগল শুরু করেছিল। অবশ্য সফলতা পেতে তার দশ বছর লেগেছিল।

৩.
আমি মাইকেলের থার্ড অ্যালবামটা অসংখ্যবার শুনেছি। বিশেষ করে টাইটেল ট্র্যাকটা। এটা প্রথম যখন শুনি, তখন জীবন অন্যরকম ছিল। আমি তখন স্কুল ড্রেস পরতাম। কিন্তু আমার গলায় আইডি কার্ড ঝুলতো না। সুন্দর একটা ব্যাজ থাকত। শার্টের পকেটের উপর, বুকে। দুপুরের শেষ দিকে আমরা কয়েকজন একসঙ্গে সাইবার ক্যাফেতে ঢুকতাম। নিশ্চিত বলতে পারব না, ইলিগ্যাল জেনেও সেই সময় কতবার ‘মিউজিক অ্যান্ড মি’ ডাউনলোড করেছি। এই গান এখনো বিস্ময়কর মনে হয়।
আজকাল বলা হয়, নতুন প্রজন্ম অনেক এগিয়ে। তাদের হাতভর্তি গ্যাজেট। তারা অনেককিছু পারে। এসব জলে ভাসা পদ্ম-টাইপ উৎসাহের সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। এই শতাব্দীতে কোনো চৌদ্দ বছর বয়সী ছেলের পক্ষে মাইকেলের মত দক্ষতায় ‘মিউজিক অ্যান্ড মি’ গাওয়া সম্ভব নয়। তারা হয়তো কোনো রিয়েলিটি শো’তে নাম লেখাবে। ইউটিউবের জন্য কন্টেট বানাবে। অন্যদের ট্রিবিউট দেবে। কিন্তু সেখানে নিজের সিগনেচার থাকবে না। মাইকেল এখানেই বিস্ময়কর।
এটা সবাই জানেন, মাইকেল নিজে সংরাইটার ছিলেন। তার লেখা গান সাউন্ড বক্স তো কাঁপিয়েছেই, ইনফ্লুয়েন্স করেছে অনেক লিরিসিস্টকে। অসংখ্য স্মরণীয় গান লিখেছেন তিনি। কিন্তু ‘মিউজিক অ্যান্ড মি’ অ্যালবামের কোনো গানেই তিনি নাক গলাতে পারেননি। হতে পারে বয়স কম বলে রেকর্ডিং কোম্পানি তাকে এলাউ করেনি। ফলে অন্যের লেখা লিরিক আর মিউজিকে যা হয়েছে, তা দেখার মত। শোনার মত তো অবশ্যই। মাইকেলের পরবর্তী ক্যারিয়ারে এ ধরনের ঘটনা প্রায় পাওয়া যায় না।
‘মিউজিক অ্যান্ড মি’ অ্যালবামটাকে আণ্ডাররেটেড বলা যায়। বাচ্চাদের অ্যালবামও বলা যায়। কিন্তু আসলেই কি এটা তাই? মাইকেল ‘ক্ল্যাসিকাল সোল’ আর ‘পপ’ গেয়েছেন এখানে। সত্যি বলতে এটা আমার পছন্দের পঞ্চাশ অ্যালবামের একটা। কারণ অখাদ্য সব বাণিজ্যিক গান গুনে যখন কান পচে যায়, তখন আমাকে ‘মিউজিক অ্যান্ড মি’র কাছে ফিরে যেতে হয়। এই অ্যালবাম সত্যিকার অর্থেই কান পরিস্কার দেয়। আগ্রহীরা অ্যালবামটা নেড়েচেড়ে দেখতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় আবদুল কাদের জিলানী (র.) মাদ্রাসায় ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প
পরবর্তী নিবন্ধভয়াল অতিমারি শিশু যখন শিক্ষক