৪০ বছর বয়সী ছলিমা বেগম ২০ বছর বয়সী ছেলে কামরুল হাসান ইমনকে তার একটি কিডনি দিয়েছিলেন। মায়ের দেওয়া কিডনি ছেলের শরীরে প্রতিস্থাপনও করা হয়েছিল। বছরখানেক আগে এই মা ও ছেলে হাসপাতাল থেকে বাড়িও ফিরেছিলেন।
মায়ের দেয়া কিডনি নিয়ে ছেলে সুস্থ শরীরে নতুন উদ্যমে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল, ভর্তি হয়েছিল রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে কিন্তু তা আর হলো না। ব্যর্থ হলো সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে বাঁচানোর জন্য মায়ের সব চেষ্টা।
কয়েকদিন আগে হঠাৎ আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে ইমন। তখন তাকে রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা হেলথ্ কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে মৃত্যু হয় তার।
ইমন উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ছুপিগোট্টা এলাকার মুহাম্মদ সোলাইমান সওদাগরের ছেলে। পরিবারের তিন ভাইয়ের মধ্যে সে দ্বিতীয় সন্তান।
আজ বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ছুফি পাড়া মসজিদ মাঠে তার নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
জানা যায়, ২০২০ সালে অসুস্থতা অনুভব করে কামরুল হাসান ইমন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারে তার দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। তার কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে বলে জানান ভারতীয় চিকিৎসক। পরে ছেলেকে বাঁচাতে মা তার একটি কিডনি দিয়ে দেন। কিডনি প্রতিস্থাপন করিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসা হয় দেশে। ভালোভাবে জীবন কাটাচ্ছিল সে। এর মধ্যে হঠাৎ আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলো।
নিহত ইমনের মামা চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য গাজী মোহাম্মদ এনাম বলেন, “ইমন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। সে চট্টগ্রাম বাইতুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিলে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। অসুস্থতার পর চিকিৎসা নিতে গিয়ে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ভারত থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।”