তারেককে দেখারও ইচ্ছা নেই মকবুলের

আজাদী অনলাইন | সোমবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:১৭ অপরাহ্ণ

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সচিব মো. মকবুল হোসেন বলেছেন, “হয় কি, হাতি যখন পাঁকে পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে- এমন একটা কথা আছে না? সেটা (লন্ডন সফর) তো মার্চ মাসে হয়েছে, এখন সেই প্রশ্নটা আসে কী করে? আমি তারেক রহমানকে কোনো দিন দেখেছি বলে মনে হয় না। তারেক রহমানকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।”

তারেক রহমানের সঙ্গে ‘গোপন বৈঠকের কারণে’ চাকরি যাওয়ার গুঞ্জন নাকচ করে তিনি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর ‘আদর্শ ধারণকারী’ একজন বলে দাবি করেন।

চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ পওয়ার পরদিন আজ সোমবার (১৭ অক্টোবর) শেষবারের মতো নিজের দপ্তরে আসেন মকবুল। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় বেশ কয়েকবার আবেগে তার বাক রুদ্ধ হয়ে আসে।

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, লন্ডন সফরে তারেক রহমানের সঙ্গে কোনো বৈঠক হয়েছিল কি না। জবাবে মকবুল বলেন, “আমরা লন্ডনে গিয়েছি গত মার্চ মাসে। আমরা একটা টিম নিয়ে গিয়েছিলাম…”

গতকাল রবিবার তথ্যসচিব মো. মকবুল হোসেনকে ‘জনস্বার্থে’ চাকরি থেকে অবসরে পাঠানোর প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সেখানে বলা হয়, “তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে (৫৫১৪) সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি হতে অবসর প্রদান করা হলো।”

কী কারণে তাকে অবসরে পাঠানো হয়েছে তা স্পষ্ট করেনি সরকার।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আজ সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারের ওই সিদ্ধান্তের ‘অন্তর্নিহিত কারণ’ তিনি জানেন না। অন্তর্নিহিত কারণ বলতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই ধরনের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে।

তাকে অবসরে পাঠানোর কারণের ব্যাপারে মকবুল হোসেন বলেন, “আমার জানা নেই, আমার জ্ঞানের ভেতর নেই, আমার কোনো অপরাধ ছিল কি না বা কোন অপরাধের কারণে অবসরে দেওয়া হয়েছে; সেটি আমার জানা নেই৷ যেহেতু এটি সরকার পারেন, আইনের ভেতরেই পারেন- সেজন্য এটি কার্যকর। আমি সরকারের প্রতি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। সরকারবিরোধী কোনো অ্যাক্টিভিটিজে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না…যদি থেকে থাকে সেটি আপনারা প্রচার করতে পারেন, আমার পক্ষ থেকে কোনো অসুবিধা নাই৷”

তিনি বলেন, “যদি প্রমাণ হয় বিএনপির সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল, আমি যেখানেই থাকি, আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। যে সারাজীবন একটাকে বিলং করল, যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, সে বিএনপির লোকের সঙ্গে কানেকশন রাখবে- এটা হয় না। এটা হতে পারে? কারণটা আমি জানি না কেন আমাকে অবসরে পাঠানো হলো। কিন্তু সরকারের এ রাইট আছে। এ বিষয়ে কথা বলার (আমার) কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অতৃপ্তি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রত্যেকটি মানুষ নিজেই সবচেয়ে বড় বিচারক। সুতরাং আমি সেই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে সবসময় প্রস্তুত।”

তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছিল কি না– এমন প্রশ্নের উত্তরে মকবুল বলেন, “মানুষ অনেক কথাই বলে, অনেক কিছুই শোনা যায়৷ শোনা কথা বিশ্বাস না করাই ভালো। আমার পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সাথে কেন দূরত্ব থাকবে? আমরা তো সবাই মিলেই কাজ করি। দূরত্বের কথা কেন আসছে, আমি জানি না। আমি উনাকে সম্মান করি। আমরা এখানে চেষ্টা করেছি, আমাদের অফিস টাইমের পরেও সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য, এ মন্ত্রণালয়ের মান-সম্মান-ইজ্জত বাড়ানোর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী ছিলাম। আমি এমন কোনো দিন নেই যে দুই ঘণ্টা বেশি কাজ করিনি৷”

মকবুল হোসেন গত বছরের ৩১ মে সচিব হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। তার আগে তিনি যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ছিলেন। ওই পদে যাওয়ার আগে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।

কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া মকবুল বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের দশম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিআইইউ-সিটি আলো সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম
পরবর্তী নিবন্ধনিখোঁজের ৫৭ ঘণ্টা পর তারা হেঁটে ফিরলেন বাড়ি