রোহিঙ্গা সমস্যা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, “এটা খুব জটিল সময়। আমাদের পলিসি হচ্ছে আর একটা রোহিঙ্গাকেও আমরা নেব না কিন্তু আমরাতো ওদেরকে মারতে পারি না।”
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার ওসমানী মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর বান্দরবান সীমান্তে সম্প্রতি কয়েক ডজন রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও ঢুকতে না দেওয়ার নীতি নিয়ে এগোলেও ‘মানবিক কারণে সরকার কঠোর হতে পারে না।”
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছি, তোমরা তোমাদের লোকগুলো একটাও পাঠাবে না কিন্তু তাদেরও ক্ষমতার বাইরে কারণ ওখানে সংঘাত হচ্ছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেজন্য ভয়ে পালিয়ে আসছে।”
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজার, টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে বসবাস করছেন।
মানবিক কারণে এতদিন ধরে এই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এলেও বাংলাদেশ শুরু থেকেই এই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে, টেকসই ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার জন্য জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের তৎকালীন সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও করে।
এরপর ২০১৯ সালে দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের নিরাপত্তা পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।
এর মধ্যে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তার দলের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেফতার করলে মিয়ানমারের সঙ্কট ঘনীভূত হয়। এরপর থেকে গণতন্ত্রপন্থী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর আন্দোলন এবং সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে হাজারো মানুষের প্রাণ গেছে সেখানে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, “সমাধান আমি এখনো জানি না। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, তারা তাদের জন্মভূমে ফিরে যাবে। এটা আমাদের এক নম্বর অগ্রাধিকার, তাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে এবং মিয়ানমারও বলেছে, তারা লোকগুলোকে নিয়ে যাবে কিন্তু ৬ বছর চলছে, একটা লোকও যায় নাই। তাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব। তবে, আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার কাছে কোনো সমাধান নাই।”