তিন সপ্তাহ আগে ইরানে পুলিশি হেফাজতে তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুতে উত্তাল অবস্থার ভেতরেই তার মৃত্যুর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সরকার।
এতে বলা হয়, মাসার মৃত্যু অসুস্থতার কারণে হয়েছে কিন্তু তা মানতে নারাজ তরুণীটির পরিবার। এখন তাদের নাকি হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন মাসার চাচাতো ভাই এরফান মোর্তেজাই।
তিনি জানান, মাসার পরিবার ও তাদের বিক্ষোভে অংশ না নিতেও জোর করা হচ্ছে। কে বা কারা চাপ প্রয়োগ করছে, সে কথা মুখে উচ্চারণ না করলেও দীর্ঘ আলোচনায় এরফান বুঝিয়ে দিয়েছেন নেপথ্যের ঘটনা।
এরফান নির্বাসিত ইরানী কুর্দি বিরোধী দল কোমলার একজন পেশমার্গ যোদ্ধা। সংগঠনটি ইরাকে অবস্থিত।
তিনি ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটাতে চাওয়াদের মধ্যে একজন।
মাসার মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে যা ঘটছে তার জন্য বহিরাগতদের প্রভাবের কথা বলেছে ইরান। দু’টি দেশের নাম উল্লেখ করলেও দেশটির সরকার এ ধরনের সংগঠনকেও সন্দেহের বাইরে রাখছে না।
পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে এরফান মোর্তেজাই বলেন, “আমাদের পরিবার ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রচুর চাপের মধ্যে রয়েছে। যে কারণে আমরা ইরানের বাইরে মানবাধিকার সংস্থা বা চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলি না। বাইরের বিশ্বের কাউকে মাসার মৃত্যু সম্পর্কে বলতে পারছি না। আমরা মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছি। আমাদের বিক্ষোভে না জড়াতে সতর্ক করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে ইরানের জনগণ বহু বছর ধরে শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ করছে কিন্তু এবার জনগণ বিপ্লবী হয়ে উঠেছে। নারী, শ্রমিক, শিক্ষক, ক্রীড়াবিদ, শিল্পী, রাস্তায় নেমে তাদের ভিন্নমতের কণ্ঠস্বরকে মাসার পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছে। আমার মতে, এ বিক্ষোভগুলো অব্যাহত থাকবে এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পতনের সাথে সাথে এর সমাপ্তি ঘটবে।”
প্রসঙ্গত, হিজাবনীতি ভাঙার অভিযোগে ইরানের পুলিশ মাসাকে আটক করে। তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর মাসার মৃত্যু হয়।
তার পরিবারের দাবি, মাসাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় মামলাও করেছে কিন্তু পুলিশ দাবি করে, হেফাজতে থাকলেও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাসার মৃত্যু হয়েছে। এরপর ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভ ঠেকাতে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী। বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তাকর্মীরা ১৫৪ জনকে হত্যা করেছে বলে জানায় নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস। গ্রেফতার করা হয়েছে শত শত নারী-পুরুষকে।