লোহাগাড়ার বড় হাতিয়ায় আবদুল গফুর (৫৫) নামে এক বৃদ্ধের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
আজ সোমবার (১৫ মে) সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৈয়বের পাড়ায় এক আখ ক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আবদুল গফুর একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আফিয়ার বাপের পাড়ার মৃত জনু মিয়ার পুত্র ও ২ সন্তানের জনক।
জানা যায়, সকালে বসতঘরের অদূরে আখ ক্ষেতে আবদুল গফুরকে দেখতে পান জনৈক কৃষক। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্বজনরা তার মরদেহ দাফনের জন্য পৈত্রিক ভিটায় নিয়ে যান।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় দেড় বছর পূর্বে পৈত্রিক ভিটা থেকে এসে তৈয়বের পাড়ায় শ্বশুরবাড়ির এলাকায় বসতঘর নির্মাণ করে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন আবদুল গফুর। গতকাল রবিবার রাতে তার স্ত্রী আয়েশা বেগম বাবার বাড়িতে ছিলেন। আবদুল গফুর শ্বশুরবাড়িতে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমানোর জন্য নিজ বসতঘরে চলে আসেন। রাতে বসতঘরে তিনি একাই ছিলেন। সকালে পুনরায় শ্বশুর বাড়ি যাবার কথা ছিল তার। পরে আখ ক্ষেতে পাওয়া যায় তার মরদেহ।
আবদুল গফুর একজন সহজ-সরল ও পরহেজগার লোক ছিলেন। তিনি প্রতি ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করতেন। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় রবিবার তিনি ফজরের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাননি। আখ ক্ষেত থেকে মরদেহ উদ্ধারের সময় তার বসতঘরের দরজা খোলা ছিল। মরদেহ উদ্ধারের স্থান আখ ক্ষেতটি তাদের ছিল না। এছাড়া তিনি কোনো গরু-ছাগলও লালন-পালন করেন না যার জন্য ঘাস কাটতে ক্ষেতে যেতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, ফজরের নামাজ আদায় করতে বের হবার সময় কে বা কারা তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। যার ফলে নিহতের শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
নিহতের স্ত্রী আয়েশা বেগম জানান, আখ ক্ষেত থেকে তার স্বামীর মরদেহ উদ্ধারের সময় মুখে ফেনা ও বিষের গন্ধ ছিল। তবে মুখের ফেনা মুছে দেবার পর বিষের গন্ধ আর পাওয়া যায়নি। তার স্বামীর সাথে কারো কোনো শত্রুতা ছিল না। তবে বসতঘরে বিদ্যুতের মিটার লাগানো সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনৈক মহিউদ্দিনের সাথে বিরোধ চলছিল। এই নিয়ে স্থানীয়ভাবে শালিস বিচারও হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হন মহিউদ্দিন। এরপর মহিউদ্দিন বিভিন্নভাবে তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন। ইতোমধ্যে মিটার লাগানো সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে মারধর ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন মহিউদ্দিন।
এ ব্যাপারে মহিউদ্দিন জানান, আবদুল গফুরের সাথে সমস্যাটি এলাকায় শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান হয়ে গেছে। সুতরাং তাদের সাথে আর কোনো বিরোধ নেই।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. ছাদেকা তুলানজুম জানান, আবদুল গফুর নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয়নি।
এদিকে, খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমান, লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আতিকুর রহমান ও বড় হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিজয় কুমার বড়ুয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শিবলী নোমান জানান, খবর পেয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে।