বিগত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে কাপ্তাই লেকের পানি হু হু করে বাড়তে থাকে। এতে কাপ্তাই লেক তীরবর্তী হয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েন।
রুলকার্ভ-এর চেয়ে কাপ্তাই লেকে প্রায় ৫ ফুট পানি বেশি রয়েছে। কাপ্তাই লেকে সর্বোচ্চ ১০৯ ফুট মীনসীলেভেল পানি ধারণক্ষমতা থাকলেও এর কাছাকাছি পানির উচ্চতা বাড়লে কাপ্তাই বাঁধ সুরক্ষায় এবং পানিবন্দি পরিবারের সুবিধার্থে লেকের পানি ছেড়ে দিতে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠে।
আজ শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কাপ্তাই লেকে পানি রয়েছে ১০৭.৫৪ ফুট মীনসিলেভেল। লেকে পানি বেড়ে যাওয়ায় রাঙামাটি জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে নিমজ্জিত এলাকার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হওয়ায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে আজ শুক্রবার থেকে কাপ্তাই লেকের পানি ছাড়া শুরু হয়।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়ার সত্যতা নিশ্চিত করে আজাদীকে বলেন, “আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়া শুরু হয়। ১৬টি গেট একযোগে ৬ইঞ্চি পরিমাণ খুলে দেয়া হলে ৯ হাজার সি.এফ.এফ. পানি লেক থেকে নির্গত হয়। এছাড়াও ৫টি জেনারেটর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সচল থাকায় সেখান দিয়েও ২৫ হাজার সি.এফ.এফ. পানি আগেই লেক থেকে নির্গত হতে থাকে। বর্তমানে ১৬টি গেট খুলে দেওয়ায় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে নির্গত মিলিয়ে মোট ৪১ হাজার সি.এফ.এফ. পানি কাপ্তাই লেক থেকে নির্গত হচ্ছে।”
এর ফলে আবার বৃষ্টি হলে এবং উজান থেকে পানি আসা অব্যাহত থাকলেও লেকের পানি আপাতত বাড়বে না বলে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাবস্থাপক আশা প্রকাশ করেন। তবে আবার ভারী বৃষ্টি হলে এবং মিজোরাম থেকে আসা পানির ধারা বৃদ্ধি পেলে বাঁধ সুরক্ষায় এবং লেক তীরবর্তী পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দিতে পানি ছাড়ার মাত্রা আরো বাড়ানো হতে পারে।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসে লেকের পানি বৃদ্ধি পায় না কারণ সেপ্টেম্বর মাসে মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টি হলেও ভারী এবং লাগাতার বৃষ্টিপাত হয় না কিন্তু এবার অনেকটা রেকর্ড ভঙ্গ করে সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী অক্টোবর মাসেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র আশঙ্কা করছে।
আজ শুক্রবার সরেজমিন কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা গেছে স্পিলওয়ের ১৬টি গেট দিয়ে একযোগে ৬ ইঞ্চি হারে পানি ছাড়া হচ্ছে। এই পানি সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে পড়ছে।
কতদিন পানি ছাড়া হবে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংশ্লিস্ট একজন কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার সকাল ১০টায় পানি ছাড়া শুরু হয়। কতদিন পানি ছাড়া অব্যাহত থাকবে সেটি এখন সঠিক বলা যাবে না। তবে আপাতত ২৪ ঘণ্টা স্পিলওয়ের গেট খোলা থাকবে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও
জানান তিনি।
কাপ্তাই লেক থেকে পানি ছাড়ার বিষয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান, বিএনএস শহীদ ঈশা খাঁ, বিএনএস শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, রাঙ্গুনিয়া এবং কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকল উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।