জরাজীর্ণ শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট)। তাই সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে আগামী তিন মাস। তবে সেতুর নিচ দিয়ে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল করবে।
সংস্কারের জন্য কালুরঘাটে ফেরি চলাচল শুরুর প্রথম দিনেই মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। কর্ণফুলীর ভরা জোয়ারের কারণে হাঁটুপানি মাড়িয়ে সেতুতে ওঠানামা করতে হয়েছে যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের। বেশি দুর্ভোগে পড়েন নারী ও শিশুরা।
ভুক্তভোগীরা জানান, দু’টি ফেরি চালুর কথা থাকলেও চালু করা হয়েছে একটি। ফলে দুই তীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে গাড়িগুলোকে। অফিস শুরু ও ছুটির সময় সৃষ্টি হয় যানজটের।
বোয়ালখালী, পটিয়া ও মোহরা এলাকার লাখো মানুষ কালুরঘাট সেতুনির্ভর। কেনাকাটা, সন্তানের স্কুল, চাকরি, চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে এপার-ওপার করতে হয় তাদের। তাই দীর্ঘদিন ধরে কালুরঘাটের শতবর্ষী রেল কাম সড়ক সেতুটি অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।
আজ মঙ্গলবার ফেরির অপেক্ষায় থাকা বোয়ালখালীর গৃহিণী রহিমা আকতার বলেন, “নদী পার হলেই শহর। এপারে ভালো স্কুল নেই, চিকিৎসালয় নেই, কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়ে সবাইকে প্রতিদিন ওপারে যেতে হয়। এখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।”
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সৈয়দুল হাসান বলেন, “ফেরির টোল বাক্স থেকে টিকেট কাটতেই যানজট লেগে যাচ্ছে। টাকা আদায়ের কাজটা ফেরিতে করলে সময়ক্ষেপণ কমতো। প্রথম দিন বলে হয়তো ভোগান্তি বেশি মনে হচ্ছে। তার ওপর ভরা জোয়ার।”
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, “কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজে আজ মঙ্গলবার সেতুটির ডেকিং ডিসমেন্টলিং (খোলা) কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাইটে নির্মাণ সামগ্রী ও ইক্যুইপমেন্ট মোবিলাইজেশন শুরু করেছে। সেতু সংস্কার ও নবায়নের পাশাপাশি পথচারীদের পারাপারের জন্য নতুনভাবে পৃথক একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে।”
তিনি বলেন, “মেরামত চলাকালীন সেতু দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ ফেরি সার্ভিস চালু করেছে। ফেরি দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। ভারী যানবাহনগুলো শাহ আমানত সেতু দিয়েও যাতায়াত করতে পারবে।”
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৮ জুন বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামতের জন্য রেলওয়ের সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে শতবর্ষী জরাজীর্ণ এই সেতু সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উপযোগী করা হবে।
সংস্কারকাজের জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সেতুটি বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ।