উচ্চবেতনের প্রলোভনে তাদের পাচার করা হয় মালয়েশিয়ায়

কক্সবাজারে স্যাটেলাইট ফোন, বন্দুক, রামদাসহ ৬ মানবপাচারকারী আটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২২ at ৯:৩৮ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারস্থ র‌্যাব-১৫ এর একটি দল শহরের বাঁকখালী নদীতে অভিযান চালিয়ে ছয় মানবপাচারকারীকে তিনটি বন্দুক, চারটি গুলি, দু’টি রামদা, একটি স্যাটেলাইট ফোন, একটি কম্পাস, একটি জিপিএস ও ১৬টি ফোনসহ গ্রেফতার করেছে আজ শনিবার (১৬ এপ্রিল)।

এই মানবপাচারকারীরা গত এক মাসে ১৫ নারী ও ৩৭ জন পুরুষকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে মিয়ানমারে বিক্রি করে দিয়েছে বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।

তিন বছর ঝিমিয়ে থাকার পর নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সাগরপথে মানবপাচারকারী চক্র। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রোহিঙ্গাদের মাঝে তৈরি হওয়া ‘হতাশা’ ও ‘অস্থিরতা’কে পুঁজি করে মার্চের মাঝামাঝি থেকে ফের সক্রিয় হয়ে উঠে এই অপরাধী চক্র।

র‌্যাব ১৫-এর অতিরিক্ত অধিনায়ক মেজর শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, আজ শনিবার ভোরে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষকে কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনা এলাকায় জড়ো করার খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল অভিযান চালায়।

অভিযানের ঘটনা টের পেয়ে দালালেরা ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ধাওয়া দিয়ে তাদের আটক করতে সক্ষম হন র‌্যাব সদস্যরা। পরে ট্রলার থেকে ছয় মানবপাচারকারীকে আটক করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া গেছে তিনটি বন্দুক, চারটি গুলি, দুটি রামদা, একটি স্যাটেলাইট ফোন, একটি কম্পাস, একটি জিপিএস কিট এবং পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের ফেলে যাওয়া ১৬টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিমকার্ড, একটি হাতঘড়ি ও এক হাজার ২০০ টাকা।

আটককৃতরা হলো জেলার মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের সিপাহীপাড়ার গোলাম কুদ্দুসের ছেলে মো. শাহজাহান (৩৭), কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা পূর্বপাড়ার নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. পারভেজ (২৩), একই এলাকার ফজল করিমের ছেলে আমির মো. ফয়সাল (২৪), আমির হোসেনের ছেলে মো. শাকের (৩০) , মো. মীর কাশেমের ছেলে মো. রফিক আলম (৩৫) ও আমির হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল মজিদ (২৭)।

র‌্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ জানান, আটককৃতরা সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত। এরা কাউকে কাউকে দালালদের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরা এ পর্যন্ত ৩৭ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারীকে মিয়ানমারে বিক্রি করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি আরও জানান, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের লোকজনই তাদের প্রধান টার্গেট। তারা মালয়েশিয়ায় উচ্চবেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে তিন লাখ টাকার চুক্তিতে মানবপাচার করে আসছিল। তারা অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে অর্থ গ্রহণ করত। তাদের বিরুদ্ধে পাচারের সময় নারীদের ধর্ষণ ও টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে বলে জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

তাদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার থানায় মামলার দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মেজর শেখ মোহাম্মদ ইউসুফ।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ এপ্রিল উখিয়া উপজেলার ভূমি অফিসের সামনে থেকে স্থানীয় মানবপাচারী চক্রের ছয় সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় ভুক্তভোগী ৪৮ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার মানবপাচারী চক্রের সকল সদস্যই উখিয়া-টেকনাফের বাসিন্দা।

তারও আগে গত ২৫ মার্চ অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাচারের সময় বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল থেকে ৫৪ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে উদ্ধার করে র‌্যাব। এ সময় দুই দালাল ও তাদের স্থানীয় এক সহযোগীকেও আটক করা হয়। গত ২১ মার্চ মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ থেকে মহেশখালী থানা পুলিশ উদ্ধার করে মালয়েশিয়াগামী ১৪৯ রোহিঙ্গাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রোহিঙ্গাদের মাঝে তৈরি হওয়া ‘হতাশা’ ও ‘অস্থিরতা’কে পুঁজি করে মার্চের মাঝামাঝি থেকে ফের সক্রিয় হয়ে উঠে এই অপরাধী চক্র। অথচ ২০১৯ সালের পর মানবপাচারকারী নেটওয়ার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপর্তুগালের লিসবনে আরো একটি মসজিদ
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় এলডিপির ইফতার মাহফিলে দুর্বৃত্তের হামলা, আহত ১