স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, “জঙ্গিদের কোনো ছাড় নাই। পাহাড়কে শান্ত করতে দেব না। আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নাই। যখনই জঙ্গি তৎপরতার কথা শুনেছি, তখনই তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হয়েছে। জঙ্গি যেই হোক, যে নামেই হোক আমাদের কাছে তাদের পরিচয় অস্ত্রধারী, জঙ্গি। তাদেরকে কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না।”
তিনি আজ রবিবার (৭ মে) দুপুরে সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলপকালে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, “বিজিবি একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল, পেশাদার ও ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এ বাহিনী সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশের ৪ হাজার ৪ শত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছে। সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো ধরনের সীমান্ত অপরাধ দমনে বিজিবি সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইসের একটি বড় চালান তারা আটক করেছে। সীমান্ত সুরক্ষা ছাড়াও বিজিবিকে যখন যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা দক্ষতার সাথে পালন করেছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ বাহিনীকে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক সীমান্তরক্ষী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ বাহিনীর সাংগঠনিক মূল কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন করে বিজিবি আজ জল, স্থল ও আকাশ পথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স, ইকুইপমেন্ট স্থাপন, আধুনিক এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবির অভিযানিক সক্ষমতাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তিন পার্বত্য জেলার সীমান্তগুলো খুবই দুর্গম এলাকায়। বিজিবি’র সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। হেলিকপ্টার দেয়া হয়েছে। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। সীমান্ত সড়কের কাজ হয়ে গেলে পাহাড়ে জঙ্গিদের তৎপরতা আর থাকবে না। তখন বিজিবি ও পুলিশ সব জায়গায় দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নবীন সৈনিকদের বলেন, “শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিক জীবনের মূল চাবিকাঠি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভারযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকদের মধ্যে তারই প্রতিফলন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত ও মুগ্ধ করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের চার মূলনীতি মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতায় উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করতে হবে।”
এর আগে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
এসময় মন্ত্রীর সাথে অভিবাদন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, বিএএম, এনডিসি, পিএসসি, বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মসিউর রহমান এনডিসি, পিএসসি।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
৯৯তম রিক্রুট ব্যাচে ৫০২ জন পুরুষ ও ৩৭ জন মহিলা রিক্রুট দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের কঠোর প্রশিক্ষণ শেষ করে আজ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে সৈনিক জীবনে পদার্পণ করেন।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের মধ্যে শারীরিক উৎকর্ষে সেরা নবীন সৈনিক (পুরুষ) মো. ফাহিম আবরার, (নারী) লাখী আক্তার, ফায়ারিংয়ে মো. আকিজ জাভেদ ও সর্ব বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক মো. সুহেল মিয়াকে ক্রেস্ট প্রদান করেন।