ঘুমে থাকায় বেশীরভাগ আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করতে পারেনি

হালদা নদীতে রাতেও ডিম ছেড়েছে মা মাছ

হাটহাজারী প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৭ মে, ২০২২ at ৬:৫৭ অপরাহ্ণ

কার্প জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র, জোয়ার-ভাটার নদী বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে মা মাছ গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে পুনরায় ডিম ছেড়েছে। তিথি চলমান থাকায় নদীতে মা মাছ ডিম ছাড়বে এই আশায় ডিম আহরণকারীর দুই/তিন রাত নদী পাহারায় থাকতে গিয়ে গত শনিবার ও রবিবার ডিম আহরণের শ্রম ও প্রচণ্ড গরমে ডিম আহরণকারীরা দুর্বল হয়ে ঘুমে থাকার কারণে গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে নদীতে ছাড়া ডিম বেশীর ভাগ আহরণকারী সংগ্রহ করতে পারেনি। মাত্র অল্প সংখ্যক লোকজন ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে।

গত বৃহস্পতিবার পূর্ণিমার তিথি শুরুর প্রথমে নদীতে সাংকেতিক ডিম ছাড়ে মা মাছ। এই তিথি/জোতে মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়বে এই প্রত্যাশা ছিল ডিম আহরণকারীদের। গত শুক্রবারও আংশিক ডিম ছাড়ে মা মাছ। পরবর্তীতে শনিবার দিবাগত রাতে আবার নমুনা ডিম ছাড়ে। তিথি/জো চলার কারণে ডিম আহরণকারীরা মনে করেছিল হয়তো মাছ এবার পুরাদমে ডিম ছাড়বে। তিথি চলমান থাকলেও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত না থাকায়, নদীর উপরিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায়, গরমে উত্তাপ বেশি এবং পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় গতকাল সোমবার নদীতে আশানুরূপ ডিম পাওয়া যায়নি।

দুই দিনে তিন শতাধিক নৌকায় মাত্র ৮ হাজার ৫ কেজি ডিম আহরিত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই সংগৃহীত ডিম থেকে মাত্র ১শ’ ৫ কেজি রেণু/পোনা হবে বলে তথ্য প্রদান করেছেন মন্ত্রণালয়ের কারিগরী কমিটি।

গত বছর ঘূর্ণিঝড়ের কারণেও ডিম কম পাওয়া গিয়েছিল। এবার পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় ডিম কম পেয়ে ডিম আহরণকারীরা এক প্রকার হতাশ হয়ে গিয়েছিল।

মাছুয়াঘোনার ডিম সংগ্রহকারী মোহাম্মদ শফিউল আলম অল্প পরিমাণ ডিম পেয়েছেন বলে জানান।

গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর জানান, সোমবার দিবাগত রাতে মাছ নদীতে ডিম ছেড়েছিল। মাছ আর ডিম ছাড়বে না মনে করে ডিম আহরণকারীরা নদী থেকে উঠে গিয়েছিল। তবে যারা নদীর কাছাকাছি ছিল তারা কিছু ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে।

মদুনাঘাট এলাকার ডিম আহরণকারী আশু বড়ুয়াও রাতে ডিম ছেড়েছে বলে নিশ্চিত করেন। তবে তিনি রাতে ঘুমে থাকার কারণে ডিম সংগ্রহ করতে পারেনি। ভোর রাতে নদীতে নামলেও তখন ডিম দেওয়া শেষ হয়ে যায়।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “মদুনাঘাট হ্যাচারি সংলগ্ন স্থানে আমার বাড়ি। আমি হ্যাচারিতে ৭/৮ মাস বিনা বেতনে কাজ করেছি, হ্যাচারি রক্ষায় অর্থ ব্যয় করেছি অথচ হ্যাচারিতে ডিম ফুটানোর জন্য আমাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া হয় না। বাহির থেকে আসা লোকজনকে সুযোগ দেওয়া হয়।”

এজন্য তিনি এবার নিজ বাড়িতে গাজী ট্যাংকের মাধ্যমে নদী থেকে সংগৃহিত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজ করছেন। এবার পর্যাপ্ত ডিম না পেলেও আসন্ন তিথিতে পরিবেশ অনুকূলে থাকলে ডিম পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই ডিম আহরণকারী।

হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়াও মা মাছ রাতে ডিম ছেড়েছে বলে জানান তবে গত দুই/তিন দিন ডিম আহরণের জন্য হালদায় অবস্থান করতে গিয়ে ডিম আহরণকারীরা রাতে ঘুমে থাকায় ডিম আহরণ করতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আজাদীকে বলেন, “আগামীকাল বুধবারও জো রয়েছে। তাছাড়া এই মাসের শেষে আরো একটি জো রয়েছে। আবার জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেও জো আছে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে সেই সময়ও মাছ ডিম ছাড়তে পারে।”

এবার বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের তোড় না থাকায় মাছ ডিম ছাড়েনি বলে উল্লেখ করেন তিনি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে নদীতে খুব কম পরিমাণ ডিম পাওয়া গেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩১৮ রানে তৃতীয় দিন শেষ করল বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধপতেঙ্গা সৈকতে অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার