ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে চারশগুণ বেশি দামে কেনাকাটা

দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে না এলে দেশ টিকবে না : হাইকোর্ট

| মঙ্গলবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৯:৩৭ অপরাহ্ণ

দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে না এলে দেশ টিকবে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ‘পর্দা কেলেঙ্কারির’ প্রসঙ্গ টেনে আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালত বলে, “বঙ্গবন্ধুর বাড়ির কাছের মেডিকেল কলেজ। আমার জাজমেন্ট আছে। তারা (ফরিদপুর মেডিকেলে) যে কেনাকাটা করেছে, চারশগুণ বেশি দাম দিয়ে কিনেছে। এটা মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট। দুর্নীতি তো একটা সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে। দুর্নীতি যদি সহনীয় পর্যায়ে না আসে দেশ টিকবে না তো। সহনীয় পর্যায়ে আনা দরকার। কেউ স্বাস্থ্যসেবা পায় না।”

এর আগে, কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগের আদেশ বাস্তবায়ন না করার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিতে তলবে হাইকোর্টে হাজির হন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। গত ১৭ জানুয়ারি তাকে তলব করেছিল হাইকোর্ট।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জে আর খান রবিন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

শুনানিতে আদালত বলে, “আমাদের কনসার্ন হচ্ছে, আমরা মানুষকে জেলে রাখি। সেখানে যে কেউ থাকতে পারে। আইনজীবীও থাকতে পারে। যেই হোক তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। আপনারা সরকারের সঙ্গে যুক্ত। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে বারবার আদালতের আদেশ পাঠানো হয়েছে কিন্তু কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে আপনাদের কোনো সুপারিশ যায় নাই। আপনি তো স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল। অবস্থান এবং অন্য দিক থেকে চিন্তা করলে আপনাদের ডাকতে আমাদের লজ্জা লাগে। এটা শোভনীয় না। বাধ্য হয়েই আমাদের ডাকতে হয়।”

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন করোনা মহামারি পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন।

আদালত আরও বলে, “আমরা অনেক বিষয়ে বারবার নির্দেশনা দেই। কিন্তু তারা সেটা গ্রাহ্য করে না। এটা দুঃখজনক। আমরা একেবারে অপারগ হয়ে কাউকে ডাকি। যখন দেখি যে, আর কাজ হচ্ছে না, তখন। এই মামলাটা হচ্ছে, ২০১৯ সালের মামলা। আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ ছিল। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বারবার বলা হয়েছে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বারবার তাদের নক দিয়েছেন কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করেননি।”

উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে আদালত বলে, “উপজেলা তো ওনাদের (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) অংশ। কোনো উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, দেখান। সরকার টাকা দিতে তো কম দেয় না। সরকার কোন খাতে টাকা বরাদ্দ দেয় না? সব খাতে টাকা দেয়।”

এরপর আদালত ডিজিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “আমাদের কথা হচ্ছে, মানুষকে স্বাস্থ্যসেবাটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এখন বিদেশিরা দেশ চালায় না। আমরা দেশ চালাচ্ছি। মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন কিন্তু ডাক্তারের কাছে যায়। ব্যক্তিগত জীবনে আপনিও ডাক্তার। এটা একটা মহান পেশা। কোনো ডাক্তারের ব্যক্তিগত জীবন আছে বলে আমার মনে হয় না কারণ তারা যে পরিমাণ সার্ভিস দেয়! সকাল থেকে চাকরি করার পর রাতে আবার চেম্বার করে।”

এ পর্যায়ে আদালত কারাগারগুলোতে চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে অধিদপ্তরের আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “পদ ছিল ১৪১। আজকে সকাল পর্যন্ত ৪২ জন চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত যোগ দিয়েছেন ১৩৬ জন চিকিৎসক।”

এরপর ডিজি আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আদালতে বলেন, “যথা সময়ে আদেশ বাস্তবায়ন করতে না পারার জন্য আমরা দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে আর এরকম হবে না। ভুল যেটা করেছি সেটা অনিচ্ছাকৃত।”

এরপর আদালত আগামী ২ মে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখে ডিজিকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহিত দেয়।

২০১৯ সালে রিটটি করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জে আর খান রবিন। তখন আদালত কারাগারে চিকিৎসক নিয়োগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে রুল জারি করেন। সেই সঙ্গে কারাগারের চিকিৎসা ব্যবস্থা, চিকিৎসক নিয়োগসহ কারাগারের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় কৃষি জমির টপসয়েল কাটায় আড়াই লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধগেঞ্জি-প্যান্ট-আন্ডারওয়্যার থেকে বের হলো পৌনে ২ কেজি স্বর্ণ