বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আওয়ামী লীগ ‘বর্গীদের মতো’ সম্পদ লুট করে এ দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাইছে।”
আজ বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) রাজধানী ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “আগে যেভাবে বর্গীরা আমাদের দেশে এসে সব সম্পদ লুট করে নিয়ে যেত, আজকে আওয়ামী লীগ ঠিক একইভাবে সম্পদ লুটের একটা আসর বসিয়েছে, লুটের একটা উৎসব সৃষ্টি করেছে। আজকে আওয়ামী লীগের সব মানুষ- তারা যেন মরিয়া হয়ে গেছে; পাগল হয়ে গেছে যে- লুট করে তারা অতি দ্রুত সব সম্পদ নিয়ে এদেশ ছেড়ে চলে যাবে।”
আওয়ামী লীগ মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সরব হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এক দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারকে পরাজিত করতে পারব। সত্যিকার অর্থেই একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণ করতে সক্ষম হব।”
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির উদ্যোগে ঐতিহাসিক ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
একাত্তরের ২ মার্চ ডাকসুর তৎকালীন ভিপি আ স ম আবদুর রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
ফখরুল বলেন, “আজকের পত্রিকায় দেখেছেন যে, চট্টগ্রামে ওএমএসের চাল কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দুই বৃদ্ধ অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। আজকে দুর্ভাগ্য যখন আমাদের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তারা চালের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। যখন তারা খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে, যখন চাল-ডাল-তেল-লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে তখন আমাদের দেশের তথাকথিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যিনি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সেই হাওরের মধ্যে গিয়ে একটা উৎসবের মধ্য দিয়ে ২৩ পদ, ২৪ পদ… মাছের রান্না করে উৎসব করছেন। শুনতে খারাপ লাগতে পারে কিন্তু এটা এই মানুষের ভাগ্যের সঙ্গে পরিহাস, মানুষের অবস্থার সঙ্গে পরিহাস।”
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, “বিদ্যুতের দাম দুই মাসে তিনবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো এবং আইন করে নিয়ে এখন প্রশাসনিক নির্দেশ দিয়েই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে। তাদের (সরকার) গায়ে লাগে না। কারণ তাদের তো বিদ্যুতের দাম দিতে হয় না। সরকারি খরচে অর্থাৎ জনগণের টাকায় তাদের এসি চলে, ফ্রিজ চলে, সবকিছু জনগণের পয়সায় চলে। কিন্তু জনগণকে তাদের পকেট থেকে বিদ্যুতের দাম দিতে হয়।”
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ায় সব পণ্যের মুল্যবৃদ্ধির শঙ্কা্ও প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “একইভাবে গ্যাসের দাম, জ্বালানি তেলের দাম, কয়লার দাম সব কিছুর দাম বাড়ছে, কোথাও কোনো জিনিসে মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে না।”
পতাকা উত্তোলনের সেই ইতিহাস টেনে জেএসডির সভাপতি রব বলেন, “১৯৭১ সালের ২ মার্চ জাতি যখন খুঁজছিল কী করতে হবে? এটা সেন্স অব প্রেডিকশন- হোয়াট টু বি ডান? তখন এই পতাকা নিয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, এই পতাকা অর্জন করতে হবে, তার জন্য স্বাধীনতা ছাড়া বিকল্প নাই।”
তিনি বলেন, “আমি আজকের দিনে কোনো বিতর্কিত কথা বলব না। সত্তর সালে যার জন্ম হয়েছে সেরকম একজনের লেখা পড়লাম আজকে যে ১৯৬৬ সালে নাকি ছয় দফার আন্দোলন করতে করতে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। ৬ দফা কি স্বাধীনতার দাবি ছিল, না স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল? দেশের মানুষ সব কী ঘাস খায়? একজন বাংলাদেশ অর্জন করেছেন। আর কারও কোনো অবদান নাই? তাহলে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ দিল কেন? দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারাল কেন? আজকে দেশের সমস্ত ইতিহাসকে এক ব্যক্তি, এক দলের, এক পরিবারের, এক গোষ্ঠীর আওতাভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এক যুগের বেশি সময় ‘ভোট ডাকাতি’ করে একটি সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে রাষ্ট্র একটা ‘বিপজ্জনক অবস্থায়’ পড়েছে বলে মন্তব্য করেন জেএসডি নেতা রব।
তিনি বলেন, “আপনারা দেখতে পারছেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এখানে আছেন, তার কোনো অবদান নেই, আ স ম আবদুর রবের কোনো অবদান নেই, সিরাজুল আলম খানের কোনো অবদান নেই, মাওলানা ভাসানীর কোনো অবদান নেই, অলি আহাদের অবদান নেই, মোহাম্মদ তোহার অবদান নেই, তাহলে এক ব্যক্তি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল যুদ্ধ করে?”
জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রবের সভাপতিত্বে সভায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য দেন।