“চট্টগ্রামে আপনাদের আতিথ্য আমার স্বামী ও আমার হৃদয় ছুঁয়েছে”

১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম সফরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

আজাদী অনলাইন | শুক্রবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১০:৫৮ অপরাহ্ণ

যুক্তরাজ্যের সদ্য প্রয়াত রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ বাংলাদেশে এসেছিলেন দুইবার।

পাকিস্তান আমলে তাঁর প্রথম সফরে ১৯৬১ সালে ঢাকার বাইরে আদমজী জুট মিলে এবং বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম সফর করেছিলেন তিনি।

পশ্চিম পাকিস্তান ঘুরে যখন রাণী পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় আসেন তখন তার রাজ সিংহাসনের আরোহণের আট বছর পেরিয়েছে।

এর মাত্র ১৪ বছর আগে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান যখন রাজা ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৫৩ সালে যুক্তরাজ্যের রাণী হন দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

সেই সফরে পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে ঢাকা আসার পর রাণীর সম্মানে আতশবাজি পোড়ানোর বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়।

ওই সফরে চট্টগ্রামে এসে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এখানে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

সেই অনুষ্ঠানে রাণী বলেছিলেন, “চট্টগ্রামে আসার পর থেকে আপনাদের আতিথ্য আমার স্বামী ও আমার হৃদয় ছুঁয়েছে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন গত অক্টোবর মাসে বয়ে যাওয়া দুর্যোগের (ঘূর্ণিঝড়) ক্ষত এখনও রয়েছে আপনাদের মনে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য যা কিছু করতে পেরেছি, তাতে আমি আনন্দিত।”

দ্বিতীয়বার তিনি এসেছিলেন ১৯৮৩ সালে।

সেবার তিনি গিয়েছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রাম পরিদর্শনে।

সেখানে তিনি গ্রামীণ নারীদের সঙ্গে সময় কাটান। নারীরা কীভাবে মুড়ি ভাজা হয় সেটি তাকে দেখানো হয়েছিল তখন।

স্বনির্ভর একটি গ্রাম হিসেবে তাঁর কাছে তুলে ধরা হয় বৈরাগীরচালাকে। তার আগমন উপলক্ষে ওই গ্রামকে মডেল গ্রামে রূপান্তর করা হয়।

সেই রূপান্তরে ওই সময় সরকার পাঁচ লাখ ডলার খরচ করেছিল বলে ওই সময় এক খবরে জানিয়েছিল মার্কিন সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড প্রেস ইন্টারন্যাশনাল।

নভেম্বর মাসের সেই সফরকালে ঢাকায় উষ্ণ অভ্যর্থনার পর ট্রেনে চড়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে যান তিনি। স্টেশনে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখান থেকে গাড়িতে করে তাকে বেশ কিছু দূরের বৈরাগীরচালা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করা হয়েছিল তাঁকে।

শহরের বাইরের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছিলেন রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। উভয় সফরেই সঙ্গে ছিলেন তার জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ।

দুই দফার সফরেই একসময় ব্রিটিশ শাসনে থাকা বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবন দেখতে গিয়েছিলেন তিনি; করেছেন নৌ ও ট্রেন ভ্রমণ।

তাঁর দ্বিতীয় সফরে বৈরাগীরচালা গ্রামে বেশ কিছুটা সময় কাটান তিনি। স্বনির্ভর একটি গ্রামে মাছ চাষের মাধ্যমে বাসিন্দাদের পুষ্টি পূরণের কথা তাকে জানানোর পাশাপাশি তার সামনে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরে দেখান জেলেরা।

তাঁর সামনে দেখানো হয় গ্রামীণ নারীদের হস্তশিল্প, তুলে ধরা হয় গ্রামের সংস্কৃতি।

দুই দফায় রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের ঢাকা সফরকালে তৎকালীন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন দুই সামরিক শাসক।

প্রথম সফরের ২২ বছরের মাথায় ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে যখন দ্বিতীয় দফায় রাণী স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকায় আসেন তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন সামরিক শাসক জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

সেবার ঢাকায় ব্রিটিশ সহায়তা সংস্থা সেইভ দ্য চিলড্রেনের কার্যক্রমও পরিদর্শন করেছিলেন রানি।

রাণীর সম্মানে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়েছিল। সফর শেষ করে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধনের জন্য দিল্লিতে যান তিনি।

ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসনে আরোহণের রজতজয়ন্তীতে কয়েকটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখেলতে গিয়ে পুকুরে ডুবে মারা গেল দুই শিশু
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে র‌্যাবের হাতে ৩ জলদস্যু আটক, অস্ত্র উদ্ধার