আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সর্বাধিক ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
আজ মঙ্গলবার(২৩ আগস্ট) কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে বিকালে এ সভা হয়।
সভা শেষে নির্বাচন ভবনে অতিরিক্ত সচিব অশোক বলেন, “মাননীয় কমিশন ডিসিশন নিয়েছে যে আগামী সংসদ নির্বাচনে অনূর্ধ্ব ১৫০টা আসনে ইভিএমে নির্বাচন করবে; অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তি সাপেক্ষে তা করবে।”
সংসদে মোট সাধারণ আসন রয়েছে ৩০০টি। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হয়েছিল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হওয়ার মানে হলো অর্ধেক আসনে যন্ত্রে ভোটগ্রহণ হবে।
বর্তমানে দেড় লাখ ইভিএম রয়েছে যা দিয়ে ৭০-৮০টি আসনে নির্বাচন করা সম্ভব। এ সংখ্যা বেশি হলে নতুন করে যন্ত্র কিনতে হবে ইসিকে।
অতিরিক্ত সচিব অশোক বলেন, “কমিশনের সিদ্ধান্ত পেলে প্রকিউরমেন্টে যাব। কমিশন সব বিষয় আমলে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার বিষয়ে তিনি বলেন, “ইসি অভ্যন্তরীনভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিটেইলস বিষয় এখানে আসেনি। সিদ্ধান্ত হয়েছে অনধিক ১৫০ আসনে করবে। ন্যূনতম একটিও হতে পারে। সর্বোচ্চটা জানানো হলো।”
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে ‘ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারার’ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়ার একদিনের মাথায় দেড়শ’ আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কমিশন সভায়।
‘রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা ও ইসির মতামত’ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে গতকাল সোমবার বলেন, “ইভিএম ব্যবহারের পক্ষ নিয়ে দলগুলোয় আপত্তি ও সমর্থন দুই রয়েছে। …সার্বিক বিষয়ে এখনও স্থির কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি ইসি। রাজনৈতিক দল ছাড়াও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার বিশ্লেষণ করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ইসি ভিন্নভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের জানানো হবে।”
নিবন্ধিত ২৮টি দল, আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সোমবার সারসংক্ষেপটি পাঠানো হয়।
ইভিএম নিয়ে ইসির সংলাপে বিএনপিসহ ১১টি দল অংশ নেয়নি। এছাড়া নির্বাচন বিষয়ে উন্মুক্ত সংলাপে অংশ নেয়নি ৯টি দল।
ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে আওয়ামী লীগসহ এক ডজনেরও বেশি দল অবস্থান জানালেও জাতীয় পার্টিসহ অর্ধেকের বেশি দল বিপক্ষে রয়েছে। সংলাপে বিরত থাকা দলগুলো ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে প্রকাশ্যে।
সংলাপে ক্ষমতাসীন দল আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনশ আসনে ইভিএমে ভোট করার দাবি জানিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, “ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধে ইভিএমের কোনো বিকল্প নেই। আমরা ইভিএম মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, চেতনায় ধারণ করি। বিশেষ কোনো এলাকা নয়, আমরা ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোটও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ দাবি জানাচ্ছি।“
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্যে দেশের মানুষ ‘প্রস্তুত নয়’ বলে মত দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। সংলাপে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছিলেন, “আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলক হতে পারে কিন্তু সারাদেশে ৩০০ আসনে ইভিএমে হলে এটা হ্যাজার্ড হয়ে যাবে। ইভিএমে ভোট দেওয়ার মতো মানুষের প্রস্তুতি নেই।”
বর্তমান ইসি নিয়ে কোনো ধরনের আগ্রহও নেই বলে জানিয়ে আসছে বিএনপি।
তবে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল দলটির জন্য অপেক্ষায় থাকার কথাও বলেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমরা মনে করি- বিএনপি যদি এ নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে আমাদের যে উদ্দেশ্য-অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা, সেটা হয়ত সফল হবে না।”
এদিকে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসি’র প্রস্তাবিত কর্মকৌশল নিয়ে আবারও সংলাপে বসার কথা রয়েছে।