দোহাজারীতে বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া দাদা-নাতির মরদেহ উদ্ধার

চন্দনাইশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | বুধবার , ৯ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:৪২ অপরাহ্ণ

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার স্রোতে চন্দনাইশের দোহাজারীতে ভেসে যাওয়া দাদা-নাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ বুধবার (৯ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন কাছেমুল উলুম মাদরাসার পাশে স্থানীয়রা বন্যার পানিতে জাল দিয়ে মাছ শিকারের সময় একটি গাছে আটকে থাকা অবস্থায় প্রথমে নাতি মো. আনাছ(১০)-এর মরদেহ এবং বিকেল ৫টার দিকে হাশিমপুর পাঠানীপুল এলাকা থেকে দাদা আবু ছৈয়দ(৮৩)-এর মরদেহ উদ্ধার করে।

নিহত আবু ছৈয়দের ছেলে মাওলানা মোক্তার হোসাইন শিবলী জানান, বন্যার পানি বাড়তে থাকায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দোহাজারী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড আফজল সওদাগর বাড়ি এলাকা থেকে তার পিতা আবু ছৈয়দ নাতি আনাছকে নিয়ে জামিজুরীস্থ তার বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তারা বন্যার স্রোতে পড়ে ভেসে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল।

নিখোঁজের পর আজ বুধবার বিকেল ৩টার দিকে নতুন দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন কাছেমুল উলুম মাদরাসার পাশে স্থানীয়রা বন্যার পানিতে জাল দিয়ে মাছ শিকারের সময় তার ভাতিজা মো. আনাছের মরদেহ উদ্ধার করে এবং একই দিন তার পিতা আবু ছৈয়দের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল মঙ্গলবার বন্যার পানির স্রোতে একইসাথে ভেসে যায় দাদা ও নাতি। আজ বুধবার স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ২ ঘণ্টার ব্যবধানে দাদা ও নাতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

চন্দনাইশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি

এদিকে, চন্দনাইশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে লোকালয় থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করে। তবে এখনো নিম্নাঞ্চলের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। পুরো উপজেলায় ধসে পড়েছে কয়েকশ’ মাটির ঘর। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের চন্দনাইশ হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ২ দিন পর আজ বিকেল থেকে স্বল্পসংখ্যক যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।

অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত চন্দনাইশের ধোপাছড়ি ইউনিয়নের একটি সড়ক

গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে গত সোমবার ভোর থেকে শঙ্খনদের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে চন্দনাইশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যায় রূপ নেয়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজর জাতীয় মহাসড়কের হাশিমপুর বড়পাড়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি কোমর সমান মহাসড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুর্গম পাহাড়ি জনপদ ধোপাছড়ি ইউনিয়নের সাথেও।

উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামীণ সড়কের উপর দিয়ে দ্রুতবেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়ে প্রত্যেকটি সড়ক।

সমস্ত বর্ষাকালীন সবজি ক্ষেত, আউশ ধানের ক্ষেত, আমন ধানের বীজতলা ও রোপা আমন ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ২ হাজার ৫৩৭টি পুকুরের মাছ।

গত রবিবার রাত থেকে টানা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে পুরো চন্দনাইশ উপজেলা। বিশেষ করে দোহাজারী বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের আওতাধীন কালিয়াইশ ইউনিয়নের উত্তর কালিয়াইশ, পূর্ব কাটগড় এলাকায় গত রবিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখায় বন্যার পানির মধ্যে ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. হাসান আহসানুল কবির জানান, চন্দনাইশ উপজেলায় ৪ হাজার ২৮৭ পুকুরের মধ্যে ২ হাজার ৫৩৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বিশেষ করে উপজেলার ধোপাছড়ি, বরকল, বরমা, বৈলতলী, সাতবাড়িয়া, হাশিমপুর ও দোহাজারী পৌরসভার মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধিত হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আজাদ হোসেন জানান, ভয়াবহ বন্যায় পুরো চন্দনাইশের অধিকাংশ সবজি ও আউশ ধানের ক্ষেত, আমন ধানের বীজতলা ও রোপা আমন ক্ষেত পানির নিচে ডুবে গেছে। সম্পূর্ণ পানি নেমে যাওয়ার পর জানা যাবে কী পরিমাণ ক্ষতিসাধিত হয়েছে।

তবে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয় বলেও জানান তিনি।

দোহাজারী পৌরসভার মেয়র মো. লোকমান হাকিম জানান, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের দিয়াকুল এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই গ্রামে অন্তত ২০০ মাটির ঘর ধসে পড়েছে। মানবেতর দিনযাপন করছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা।

তিনি গত ২ দিনে বন্যাকবলিত পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পানিবন্দী ২০ হাজার মানুষের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জিমরান মোহাম্মদ সায়েক জানান, চন্দনাইশের ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন পুরোপুরি বন্যা কবলিত।

আজ বুধবার ভোরে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও এখনো অনেক স্থানে যাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলার বরমা, বৈলতলী, বরকল, ধোপাছড়ি ইউনিয়ন ও দোহাজারী পৌরসভায় এখনো বন্যার পানি রয়েছে। পুরো উপজেলায় এখনো প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় বন্যাকবলিত এলাকায় জনগণের পাশে এম এ মোতালেব সিআইপি