কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।
আজ বুধবার(১৫ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী এই ফল ঘোষণা করেন।
তবে তার কয়েক মিনিট আগে আগে হৈ চৈয়ের মধ্যে কারচুপির সন্দেহের কথা বলেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু।
রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল অনুযায়ী, ১০৫ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট।
বিদায়ী মেয়র সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।
তৃতীয় স্থানে থাকা নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।
ফল ঘোষণার সময় ফল পরিবেশন কেন্দ্রেই ছিলেন সাক্কু।
রিফাত না থাকলেও উপস্থিত ছিলেন তার এজেন্ট-সমর্থকরা।
পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণার আধ ঘণ্টা আগেই রাত ৯টায় ১০১টি কেন্দ্রের ফল যখন ঘোষিত হয়েছিল তখন ৬২৯ ভোটে এগিয়ে ছিলেন সাক্কু।
তার ১৫ মিনিট আগে ফল ঘোষণা কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হন সাক্কু। প্রায় একই সময়ে নৌকার পক্ষে স্লোগান দিতে দিতে সেখানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিফাতের শখানেক সমর্থক।
এই উত্তেজনার মধ্যে ফল ঘোষণা থমকে যায়। এক পর্যায়ে ফল ঘোষণা কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান নেওয়া বিপুল সংখ্যক পুলিশ ধাওয়া দিয়ে বেশ কিছু নৌকার সমর্থককে বের করে দেয়।
এ সময় সাক্কু বলেন, “আমি রেজাল্ট না নিয়ে এখান থেকে যাব না। প্রয়োজনে লাশ যাবে।”
ফল ঘোষণায় দেরিতে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, “আর চারটা কেন্দ্র বাকি আছে, দেন না কেন?”
কারচুপির কোনো শঙ্কা করছেন কি না-এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সাক্কু তখন বলেছিলেন, “সম্ভব। তা নাহলে এসব করতেছে কেন?”
তার কিছুক্ষণ পরই সাড়ে ৯টায় বাকি চারটি কেন্দ্রসহ পূর্ণাঙ্গ ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এরপর ক্ষুব্ধ সাক্কু পৌনে ১০টার দিকে ফল পরিবেশন কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান।
রিটার্নিং কর্মকর্তার ঘোষিত ফল (মেয়র পদ)
আরফানুল হক রিফাত (নৌকা) ৫০,৩১০ ভোট
মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি) ৪৯,৯৬৭ ভোট
নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া) ২৯,০৯৯ ভোট
রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) ৩,০৪০ ভোট
কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ) ২,৩২৯ ভোট
রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, কুমিল্লা সিটির ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ ভোটারের মধ্যে ১০৫ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৪ জন। এর মধ্যে বৈধ ভোট ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪৫টি। ভোট গৃহীত হয়নি ৩১৯টি। ভোটের হার ৫৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
অর্থাৎ মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর ভোটের ব্যবধান বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যার কাছাকাছি।
এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রিফাত দলীয় প্রতীক নিয়ে ভোটে নামলেও বিএনপি ভোটে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে দলটির দুই নেতা সাক্কু ও কায়সার দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেই ভোটের লড়াইয়ে নামেন।
সেই হিসাবে বিএনপির বহিষ্কৃত দুই নেতার ভোট (৭৯,০৬৬) নৌকার বিজয়ী প্রার্থী রিফাতের চেয়ে ২৮ হাজার ৭৫৬টি বেশি।
কুমিল্লা পৌরসভার চেয়ারম্যান সাক্কু সিটি করপোরেশন হওয়ার পর দু’টি ভোটেই মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১২ সালের নির্বাচনে তিনি ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেইবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আফজল খান পেয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট। সেইবার ভোটের হার ছিল ৭৫ শতাংশ।
২০১৭ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হয়ে ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন সাক্কু। সেইবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা। বর্তমানে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সীমা সেইবার নৌকা প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। ভোটের হার ছিল ৬৪ শতাংশ।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কুমিল্লায়ই প্রথম নির্বাচন হলো যেখানে সব কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ হয় ইভিএমে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ইসির নির্দেশনা উপেক্ষার কারণে ভোটের আগে ব্যাপক আলোচনা হলেও কুমিল্লায় ভোটগ্রহণ ছিল শান্তিপূর্ণ।
নিজেদের প্রথম নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মূল্যায়নের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।