চুয়েট খুলবে ২২ জুন

সিন্ডিকেট সভায় নতুন সিদ্ধান্ত

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ১৪ জুন, ২০২২ at ৯:১৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(চুয়েট) আজ মঙ্গলবার(১৪ জুন) দুপুরে ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে আগামী ২২ জুন।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের ১২৪তম বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত নম্বর ১২৪/১ মূলে তা গ্রহণ করা হয়েছে। সিন্ডিকেট সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ফারুক-উজ-জামান চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২১ জুন মঙ্গলবার পর্যন্ত ইতোপূর্বে ঘোষিত (হল ভেকেন্টসহ) স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম (সকল প্রকার পরীক্ষাসহ) স্থগিত থাকবে। পরদিন ২২ জুন বুধবার সকল হল খুলে দেয়া হবে এবং শিক্ষা কার্যক্রম পূর্বের মতো চালু হবে। তবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বিষয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে অর্থাৎ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে ১৭ জুলাই।

প্রসঙ্গত, পূর্বের বিজ্ঞপ্তিতে ৪ দিন ধরে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলসমূহ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।

এছাড়া, ৬ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটিতে থাকবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা ছিল আগামী ১৭ জুলাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ডিন, ইন্সটিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, প্রভোস্ট এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সমন্বয়ে দুপুরে আয়োজিত এক জরুরি সভায় উক্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদের আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে ও ছাত্রীদের আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে হল ভ্যাকেন্ট করতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় অনলাইনে আয়োজিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় দুপুরের জরুরি সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এদিকে, ছাত্রলীগের সংঘর্ষের জেরে মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে হেলমেটধারীদের টহল দিতে দেখা গেছে। এদিন ভোর পাঁচটা থেকে সশস্ত্র অবস্থায় হলুদ হেলমেট পরা ১৫-২০ জনের একটি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বরে অবস্থান করছে। হেলমেটধারী ওই তরুণদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি বিভাগের কোনো শিক্ষার্থী ক্লাসে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এর আগে মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহনের বাস চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশে রওনা দিলে হেলমেটধারীরা বাসগুলো আটকে পুনরায় গ্যারেজে ফেরত পাঠায়।

এর আগে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারি ও সশস্ত্র অবস্থানের কারণে গতকাল সোমবার দিনভর ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। এরপর রাতে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়। এতে পরিস্থিতি আরও ভীতিকর হয়ে ওঠে।

এ অবস্থায় অঘটনের আশঙ্কায় রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনোয়ার হোসেন শামীম, রাউজান মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন ও চুয়েটের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্টরা চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বরে রাতভর অবস্থান করেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

সোমবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী চুয়েটের ১২টি বিভাগের ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জেরে নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এদিকে, গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় বিবদমান দুই পক্ষের এক গ্রুপ মিছিল বের করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পিছু হটে। তবে দুই পক্ষই যার যার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিজেদের সশস্ত্র অবস্থান অব্যাহত রাখে। সন্ধ্যার পর থেকে বহিরাগতদের আনাগোনাও লক্ষ্য করা গেছে বলে জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, সোমবার রাত ৯টার পর থেকে ক্যাম্পাসে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ও আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

এ সময় এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম, ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন ও চুয়েটের প্রক্টর রেজাউল করিমসহ সংশ্লিষ্টরা চুয়েটের স্বাধীনতা চত্বরে ছুটে আসেন।

তারা বলেন, শব্দগুলো গুলির ছিল না। বিবদমান দুই গ্রুপ পটকা (বাজি) ফাটিয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পরিস্থিত এখন স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে, শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা গতকাল সোমবার চুয়েট থেকে ছেড়ে যাওয়া বিকেল ৫টার গাড়িতে ড. কুদরত-এ-খুদা হলের শিক্ষার্থীদের উঠতে দেয়নি। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা দায়িত্বরত শিক্ষকদের প্রকাশ্যে গালিগালাজ করে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম বলেন, যারা এভাবে দিনদুপুরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে এবং শিক্ষকদের গালিগালাজ করে তারা কেউ সুস্থ মস্তিষ্কের নয়। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট সৈয়দ মাসরুর আহমেদকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জড়িতদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে ইয়াবা পাচার মামলায় যুবকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধ৩য় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টায় সুইপারের ২০ বছরের কারাদণ্ড