চট্টগ্রামে কোভিড শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গত দুই মাস ধরে শূন্যের কোঠায় থাকার পর গত এক সপ্তাহ ধরে আবারও বাড়তে শুরু করেছে।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক সপ্তাহে শনাক্তের হার শূ্ন্য থেকে বেড়ে ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই হার এখনও ‘খুব বেশি নয়’ জানিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি নগরীতে সপ্তাহখানেক ধরে ভাইরাস জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় লক্ষণ দেখা দিলে, কোভিড-১৯ এর নমুনা পরীক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আজ বৃহস্পতিবার(১৬ জুন) জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘন্টায় জেলায় মোট ৫১৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
শনাক্তদের মধ্যে নগরীতেই ১৪ জন এবং উপজেলার মধ্যে কেবল হাটহাজারীতে ২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, “আজ শনাক্তের হার ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুসারে শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ধরা হয়।”
এর আগে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে করোনভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। মাঝে দুই মাস কোভিড-১৯ আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি।
পরে গত ৩০ মে ২ জনের নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর ১ জুন ১জন, ২ জুন ২ জন ও ৩ জুন ২ জনের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। তারপর ১১ জুন পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি।
এরপর গত ১২ জুন ৫ জন, ১৩ জুন ৪ জন এবং ১৪ জুনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “শনাক্তের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে। অবশ্যই সবাইকে সর্তক হতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।”
শনাক্তদের লক্ষণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এবার আক্রান্তরা এখনও গন্ধ পাচ্ছেন। তাদের কন্ঠস্বরেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে ঘরে ঘরে এখন ভাইরাস জ্বর। তাই লক্ষণ দেখা গেলে নমুনা পরীক্ষা করানো উচিত।”
শনাক্ত বাড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো রোগীর শারীরিক অবস্থা তেমন গুরুতর নয় জানিয়ে ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, “এখনো কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। বাড়ি থেকেই শনাক্তরা চিকিৎসা নিচ্ছে।
“তবে আমাদের প্রস্তুতি আছে। এখনও জেনারেল হাসপাতাল কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থাপনায় চলছে। পরে প্রয়োজন হলে শুধুমাত্র কোভিড রোগীদের সেবা দেওয়া হবে।”
মহামারীর শুরু থেকে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৯২ হাজার ১৪৬ জন।
এখন পর্যন্ত কোভিড আক্রান্ত হয়ে জেলায় ১৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৭৩৪ জন এবং ৬২৮ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
চট্টগ্রামসহ পুরো দেশেই আবারও দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ১১ সপ্তাহ পর দেশজুড়ে দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা গত রোববার আবার একশ ছাড়িয়ে যায়।
সেদিন সারা দেশে ১০৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রমণের দাপট কমলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগী হাজারের নিচে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে ২৬ মার্চ তা একশর নিচে নেমে এসেছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ২০০টি নমুনা পরীক্ষা করে ওই ৩৫৭ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা ১৪ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।