কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি (মোখার লাইভ আপডেট সহ)

সেন্টমার্টিনে হোটেল-মোটেলগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১১ মে, ২০২৩ at ১০:২৬ অপরাহ্ণ

গভীর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বা নারিকেল জিঞ্জিরায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হোটেল-মোটেলগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আশংকায় সাগরে মাছ ধরারত অধিকাংশ ট্রলারই ঘাটে ফিরে এসেছে। বাকী ট্রলারগুলোও উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরছে বলে জানিয়েছে ট্রলার মালিক সমিতি।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরেও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়।

অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে পর্যটকদের সতর্ক করার জন্য আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলার পর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সৈকতে লাল পতাকা পুঁতে দেয়া হয়েছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী মাহবুবুল আলম।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের আশংকায় সাগরে মাছ ধরারত কক্সবাজারের প্রায় ৭০% ট্রলারই ঘাটে ফিরে এসেছে। বাকী ট্রলারগুলোও উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরছে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে।

তিনি জানান, কক্সবাজারে প্রায় ৭ হাজার ফিশিং বোট রয়েছে তবে সব বোট তাদের সমিতির সদস্য নয়।

মোখা’র লাইভ আপডেট

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সভা করে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র যেখানে ৫ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপকূলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হবে। এজন্য ৮ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক মাঠে রয়েছে।

তিনি বলেন, “জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ৫৯০ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে তিন মেট্রিক টন বিস্কুট, তিন দশমিক চার মেট্রিক টন ড্রাই কেক, ২০ হাজার পিস ওরস্যালাইন, ৪০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন এবং নগদ ২০ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।”

কক্সবাজার শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামছুদ্দোজা নয়ন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখার সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে উখিয়া ও টেকনাফে ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে।

এদিকে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষায় জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত লবণ মাঠগুলোতে লবণ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লবণ চাষীরা। তারা উৎপাদিত লবণ মাঠ থেকে গুদামে ও মাঠে গর্ত করে সংরক্ষণ করছেন বলে জানান বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক ড. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, “সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকে লবণচাষীদের সতর্ক করতে বিসিক-এর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সারাদিন ধরে জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ মাঠগুলোতে লিফলেট বিতরণ ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। লবণচাষীরাও তাদের উৎপাদিত লবণ ট্রাক ও নৌকাযোগে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ মাঠেই গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে মজুদ করে রাখছেন।”

তবে এখনও সূর্যালোক ভালো থাকায় লবণ মাঠে পুরোদমে লবণ উৎপাদন চলছে বলে জানান তিনি।

বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক জানান, দেশে লবণ উৎপাদন ইতোমধ্যে ২২ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবারও অন্তত ২৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত দেশে ২১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছিল। সূর্যালোক ভালো থাকলে আগামীকাল শুক্রবারও (১২ মে) জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ মাঠগুলোতে লবণ উৎপাদন চলবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইমরানের গ্রেফতার ‘অবৈধ’: পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট
পরবর্তী নিবন্ধচবি ছাত্রলীগ সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে কুশপুত্তলিকা দাহ