কক্সবাজার বঙ্গোপসাগর উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে রুপালী ইলিশ। গত দুই দিন ধরে গভীর সাগর থেকে ইলিশ বোঝাই করে ঘাটে ফিরছে শত শত ট্রলার। এর ফলে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটসহ সামুদ্রিক মৎস্য ঘাটগুলো জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় এখন বেশ সরগরম।
ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত মাসের শেষ দিকে ফের সাগরে মাছ ধরা শুরু হয়। তবে এতদিন পর ইলিশ ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ আশানুরূভাবে ধরা পড়ছে বলে জানান জেলেরা।
আজ সোমবার (৭ নভেম্বর) সকালে ফিশারীঘাটসহ শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পরিদর্শনে ২শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দেখা পাওয়া যায়। তবে ধরা পড়া ইলিশের গড় ওজন ৭৫০ গ্রামের কম নয় বলে জানান ফিশারীঘাটের ব্যবসায়ী কাইছার হামিদ।
তিনি জানান, প্রতি বোটে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৫০টির মতো ইলিশের ওজন ১২শ’ গ্রাম থেকে দেড় কেজির মধ্যে। আর কিছু ছোট ইলিশও ধরা পড়েছে।
ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, সাগর থেকে ধরে আনা ছোট ইলিশগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। আর বড় ইলিশগুলো রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১২টি ট্রাকে প্রায় ৭০ মেট্রিক টন ইলিশ কক্সবাজার থেকে বাইরে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশগুলো কেজি প্রতি ৯শ থেকে ১১শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর ছোট ইলিশগুলো বিক্রি হয়েছে আকার ভেদে ৩শ থেকে ৬শ টাকায়।
জেলে ও ট্রলার মালিকরা জানান, ইলিশ ছাড়াও কোরাল, চাঁন্দা, ঘুইজ্যা, লইট্যাসহ আরো বহু প্রজাতির মাছ ধরা পড়েছে সাগরে।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, “এ বছর ঘন ঘন বৈরি আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টির কারণে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ আশানুরূপ হয়নি। অধিকাংশ ট্রলার মালিক জ্বালানি খরচও তুলতে পারেননি। ফলে ধীরে ধীরে ট্রলারগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায়। আর গত কয়েকদিনের ইলিশ আহরণ ফের আশা জাগিয়েছে জেলেদের।”
ট্রলার মালিকরা জানান, কক্সবাজারে ছোটবড় প্রায় ৮ হাজার ফিশিং বোটে লক্ষাধিক জেলে সাগরে মাছধরা পেশায় নিয়োজিত রয়েছে।
কক্সবাজারে প্রধানতঃ দুই ধরনের মাছ ধরার বোট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে থাকে যে কারণে ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালে ইলিশ ব্যতীত ছোট আকারের প্রায় পাঁচ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ে যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।
তিনি জানান, কক্সবাজারে আকার ভেদে একেকটি বড় নৌযানে ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌ-যানে ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। এই ককশিটের বোটগুলো সাগর থেকে মাছ ধরে ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসে।