কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আজ বুধবার (৯ আগস্ট) সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। তবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি স্থান এখনও পানির নিচে থাকায় এ সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল এখনও শুরু হয়নি। পানি নেমে গেলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকালে এ সড়কেও পুনরায় যান চলাচল শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কক্সবাজারে গত দুই দিন ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে এবং নিম্নাঞ্চলে আটকে থাকা ঢলের পানি নেমে যাচ্ছে। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া অধিকাংশ মানুষই তাদের বাড়িঘরে ফিরে গেছে।
এর আগে গত সোমবার রাত পর্যন্ত টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর বাঁধ একাধিক অংশে ভেঙে যায়। এসব ভাঙন দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম।
ভারী বর্ষণের কারণে সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের হাশিমপুর কসাইপাড়া, পাঠানীপুল, দোহাজারী পৌরসভার কলঘর ব্রিজ এলাকায় রাস্তার উপর প্রায় আড়াই ফুট এবং সাতকানিয়ার কেউচিয়ার নয়াখাল, নতুন রেললাইন, কেরানীহাটবাজার এবং ছদাহার হাসমতের দোকান এলাকায় মহাসড়কের উপর দিয়ে এক ফুটের বেশি পানি প্রবাহিত হলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। একই কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সড়কের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের কাড়ির মাথা, চেইন্দা ও পানেরছড়া এলাকায় এই সড়কের উপর দিয়ে ৩ ফুটের বেশি পানি প্রবাহিত হয়।
ভারী বর্ষণে মঙ্গলবার কক্সবাজারের ৬ উপজেলার ৩ শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যায় পানিতে ডুবে ও পাহাড় ধসে চার শিশু ও এক নারীসহ ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ৯ ও ১০ আগস্ট ২ দিনের জন্য কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাহাড় ধস ও বন্যা মোকাবেলায় কক্সবাজার ও বান্দরবানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
তবে গত দুই দিন কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নিম্নাঞ্চলে আটকে পড়া ঢলের পানি নেমে যাচ্ছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনও তাদের বাড়িঘরে ফিরে যাচ্ছে বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ।
তিনি জানান, বন্যায় কক্সবাজার জেলার ৬০ ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। তাদের মধ্যে দুর্গত মানুষদের জন্য খুলে দেয়া ২০৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় কিন্তু আজ বুধবার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রিত লোকজন তাদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করে।
কক্সবাজার বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী জানান, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের কাড়ির মাথা, চেইন্দা ও পানের ছড়া এলাকার বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আজ বুধবার সকালেই এই সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
তবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকটি স্থান এখনও পানির নিচে থাকায় এ সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল এখনও শুরু হয়নি। অবশ্য দুপুরের পর থেকে কিছু কিছু যানবাহন চকরিয়া-বাঁশখালী-আনোয়ারা সড়ক হয়ে চট্টগ্রামে যাতায়াত করে বলে জানা যায়।
পানি নেমে গেলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কেও পুনরায় দূরপাল্লার যান চলাচল শুরু হবে বলে জানান কক্সবাজারস্থ এসআলম পরিবহনের ইনচার্জ নুরুল আলম।