কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

৬ উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী

কক্সবাজার প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৮ আগস্ট, ২০২৩ at ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে কক্সবাজারের ৯ উপজেলার মধ্যে ৬ উপজেলার ৩ শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আগামীকাল বুধবার (৯ আগস্ট) ও বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ২ দিনের জন্য কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাহাড় ধস ও বন্যা মোকাবেলায় কক্সবাজার ও বান্দরবানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, বন্যায় কক্সবাজার জেলার ৬০ ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ পর্যন্ত তিন উপজেলায় ৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। দুর্গত মানুষদের জন্য ২০৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। সেসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি জানান, বন্যায় চকরিয়া-পেকুয়ায় ৪৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক, উখিয়ায় ৩ কিমি কাঁচা সড়ক এবং টেকনাফ মহাসড়ক আড়াই কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবর্ষণে দুর্গতদের ইতোমধ্যে ৫৮ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বড় ধরনের ক্ষতি এড়াতে সকল বিভাগ একীভূত হয়ে কাজ করছে।

এদিকে, দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন কাজ শুরু করেছে। রামু সেনানিবাসে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন, কক্সবাজারে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৭ মিলিমিটার এবং ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি কমে গেছে। আজ বুধবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এর আগে সোমবার রাত পর্যন্ত টানা কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর বাঁধ একাধিক অংশে ভেঙে যায়। এসব ভাঙন দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। ভারি বর্ষণের কারণে সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল হতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের হাশিমপুর কসাইপাড়া, পাঠানীপুল, দোহাজারী পৌরসভার কলঘর ব্রিজ এলাকায় রাস্তার উপর প্রায় আড়াই ফুট এবং সাতকানিয়ার কেউচিয়ার নয়াখাল, নতুন রেললাইন, কেরানীহাটবাজার এবং ছদাহার হাসমতের দোকান এলাকায় মহাসড়কের উপর দিয়ে এক ফুটের বেশি পানি প্রবাহিত হলে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

একই কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সড়কের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের কাড়ির মাথা, চেইন্দা ও পানেরছড়া এলাকায় এই সড়কের উপর দিয়ে ৩ ফুটের বেশি পানি প্রবাহিত হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই দুই সড়কে বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও যান চলাচল শুরু হয়নি। এর আগে গতকাল সোমবার থেকে বান্দরবান সড়কের বাজালিয়া এলাকায় পানি উঠে কক্সবাজার-চট্টগ্রামের সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানান, পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টি এবং জোয়ারের ঢেউতে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চকরিয়ার পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী।

ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে কাকরা, লক্ষ্যরচর, বুমুবিল ছড়ি, সুরেজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল, কোনাখালী ইউনিয়ন। মাতামুহুরীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ঢলের পানির তোড়ে কইন্যারকুম, বিএমচর, মেহেরনামা বেরি বাঁধ ভেঙে গেছে। আরো একাধিক এলাকায় পাউবোর বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং বৃষ্টি না থামলে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা রয়েছে।

পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা জানান, পাহাড়ি ঢলে পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া, মগনামা, টৈটং, বারবাকিয়া, শিলখালী ও রাজাখালী নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। দেখা দিয়েছে নিরাপদ পানি, খাবারের সংকট দেখা গেছে। বানৌজা শেখ হাসিনা সড়কসহ অনেক সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অধিকাংশ গ্রামে বাসাবাড়ি পানিবন্দী।

জেলা পরিষদের ঈদগাঁও উপজেলার সদস্য মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, “ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর বাঁধ ভেঙে ঈদগাঁওর জালালাবাদ, ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর, পোকখালী ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামে বন্যার পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে গ্রামের সড়কগুলোও। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। কৃষিজমিসহ তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর আমনের বীজতলা। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, হ্যাচারি, পুকুর।”

রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা জানান, উপজেলার ফতেখাঁরকুল, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, চাকমারকুল, রাজারকুল, জোয়ারিয়ানালা, দক্ষিণ মিঠাছড়িসহ বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দী মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বাঁকখালীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় তীব্র স্রোতে বিভিন্ন গ্রামের সাঁকো ভেসে গেছে। ফলে স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার করছেন।

বন্যাদুর্গতের জেলা প্রশাসকের দেয়া ২ মেট্টিক টন চাল ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। দেয়া হচ্ছে শুকনো খাবারও।

কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, “আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নিচু হাওয়ায় পানিতে ডুবে আছে। এসব এলাকার লোকজনকে সরিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে এক হাজার মানুষকে দুপুরের খাবার দিলেন দীপংকর তালুকদার এমপি
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা