বন্যার পানি সরে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যান চলাচল শুরু হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনও তাদের বাড়িঘরে ফিরে গেছে।
কক্সবাজারে গত বুধবার বিকাল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কোন বৃষ্টিপাত হয়নি। আগেরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে মঙ্গলবার ভোররাত থেকেই মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর বাঁধ একাধিক অংশে ভেঙ্গে যায়। এসব ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। ভারী বর্ষণের কারণে সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল হতে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দোহাজারী হাইওয়ে থানার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের হাশিমপুর কসাইপাড়া, পাঠানীপুল, দোহাজারী পৌরসভার কলঘর ব্রীজ এলাকায় রাস্তার উপর প্রায় আড়াইফুট এবং সাতকানিয়ার কেউচিয়ার নয়াখাল, নতুন রেললাইন, কেরানীহাটবাজার এবং ছদাহার হাসমতের দোকান এলাকায় মহাসড়কের উপর দিয়ে একফুটের বেশি পানি প্রবাহিত হলে যান চলাচলে বিঘœ ঘটে। একই কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এই সড়কের রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের কাড়ির মাথা ও চেইন্দা এলাকায় এই সড়কের উপর দিয়ে ৩ ফুটের বেশি পানি প্রবাহিত হয়। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বুধবার সকাল থেকেই কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু বুধবারও কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাতকানিয়ার কয়েকটি স্থান জলমগ্ন থাকায় এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। একই কারণে কক্সবাজার-বান্দরবান ও চট্টগ্রাম- বান্দরবান সড়কেও যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়।
সৌদিয়া পরিবহণের নিরূপম পাল নীরু জানান, বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটের সময় সৌদিয়া পরিবহণের প্রথম বাস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করে এবং যথাসময়ে চট্টগ্রাম শহরে পৌঁছায়।
গ্রীণলাইন পরিবহণের সুলতান আহমদ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাদের বাসগুলো যথারীতি কক্সবাজার থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে এবং ঢাকার বাসগুলোও যাত্রী নিয়ে বিকালে কক্সবাজারে পৌঁছেছে।
মঙ্গলবারের বন্যায় কক্সবাজারের ৬ উপজেলার ৩ শতাধিক গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যায় পানিতে ডুবে ও পাহাড় ধসে চারশিশু ও এক নারীসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৯ ও ১০ আগস্ট ২দিনের জন্য কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাহাড় ধস ও বন্যা মোকাবেলায় কক্সবাজার ও বান্দরবানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
তবে গত ৩দিন কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নি¤œাঞ্চলে আটকে পড়া ঢলের পানি নেমে যাচ্ছে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনও তাদের বাড়িঘরে ফিরে গেছে বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ। তিনি জানান, বন্যায় কক্সবাজার জেলার ৬০ ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। এরমধ্যে দূর্গত মানুষদের জন্য খুলে দেয়া ২০৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। কিন্তু বুধবার পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রিত লোকজন তাদের বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার বাকী লোকজননও তাদের বাড়িঘরে ফিরে যায়।