বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গতকাল রবিবার মধ্যরাতে (২৪ জুলাই) ফের মাছ ধরা শুরু হয়েছে। ফলে দুই মাসাধিককাল পর বাজারে এসেছে সামুদ্রিক মাছ। জেলার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রসহ জেলেপল্লীগুলোতে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। কক্সবাজারের মানুষ ফের নিতে পারছে তাজা মাছের স্বাদ।
ট্রলার মালিকরা জানান, রবিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে কক্সবাজারের জেলেরা সাগরে রওয়ানা দেন। তবে আজ সোমবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারের প্রায় ৪০% ভাগ ট্রলার সাগরে গেছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ।
তিনি জানান, রসদ কেনার টাকা না থাকায় অনেক ট্রলার মালিক এখনও তাদের ট্রলার সাগরে পাঠাতে পারেনি। বেশিরভাগ ট্রলার মালিক ঋণ নিয়েই এখন ফিশিং ব্যবসা করছে।
তিনি জানান, কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারীঘাট, কস্তুরাঘাট, কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাট থেকেই শহরের অধিকাংশ ট্রলার সাগরে আসা-যাওয়া করে। অন্য ট্রলারগুলো জেলার অন্যান্য উপকূল থেকে সাগরে যাতায়াত করে।
ট্রলার মালিকরা জানান, কক্সবাজারের প্রায় ৭ হাজার ট্রলারে লক্ষাধিক জেলে সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত আছে। সাগরে মাছধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে।
ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। বিহিন্দি জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। সোমবার থেকে বাজারে এই পাঁচকাড়া মাছ এলেও গভীর সাগর থেকে ইলিশ ধরে ট্রলারগুলো ফিরতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান ট্রলার মালিকরা।
দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম বলেন, “কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাটের ছোট বোটগুলো রবিবার মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পরই মাছ ধরতে রওয়ানা দেয় এবং একইদিন ভোররাতে মাছ ধরে পুনরায় ঘাটে ফিরে আসে। ফলে আজ সোমবার সকাল থেকেই কক্সবাজারের মানুষ ফের সাগরের তাজা মাছের স্বাদ নিতে পারছেন।”
কক্সবাজার ও শহরতলী ছাড়াও উখিয়ার ইনানী, পাটুয়ারটেক, রেজু ঘাটঘর, মনখালী ও টেকনাফের শাপলাপুর বাজারে আজ থেকে সামুদ্রিক মাছ আসছে বলে জানান শামলাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বাজার কমিটির সভাপতি মাস্টার এমএ মনজুর।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, “নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই মাসাধিককাল ধরে নির্জীব থাকা জেলার প্রধান মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারীঘাটসহ জেলার অন্যান্য জেলেপল্লীগুলোতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তবে সোমবার থেকে ছোট মাছগুলো বাজারে পাওয়া গেলেও ইলিশ পেতে আরো ৫/৭ দিন সময় লাগবে।”
উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এর আগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভাণ্ডারের সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণও ছিল এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়।