কক্সবাজারের বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া এক ট্রলার থেকে ১০ মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বাঁশখালীর ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে আজ রবিবার (৩০ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চজ্ঞার আদালতে হাজির করা হলে তারা ২ জনই এই জবানবন্দি প্রদান করেন।
গত ২৫ এপ্রিল র্যাবের একটি দল বাঁশখালীর কুদুকখালী থেকে ওই এলাকার মৃত সিরাজুল হকের ছেলে ফজল কাদের মাঝি ও শামসুল আলমের ছেলে আবু তৈয়ব মাঝিকে বঙ্গোপসাগরে মরদেহ উদ্ধারের মামলায় আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিল। এরপর আদালতের নির্দেশে গত ২৭ এপ্রিল তাদের ৩ দিনের রিমান্ডে আনা হয়। রিমান্ড শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস ২ জনকে আদালতে হাজির করেন।
পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানান, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২ জন আসামী ঘটনার ব্যাপারে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। এর প্রেক্ষিতে তাদেরকে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চজ্ঞার আদালতে উপস্থাপন করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
তিনি জানান, রিমান্ডে এই ২ আসামী স্বীকার করেছে যে গত ৯ এপ্রিল সাগরে ৭/৮টি ট্রলারের লোক মিলে সামশু মাঝির ট্রলারটিকে ঘিরে ডাকাত-ডাকাত বলে মারতে দেখেছে। যারা মারধর করছিল তারা সকলেই মহেশখালীর মানুষ। আর তারা বাঁশখালীর বাসিন্দা। ফলে এ ২ জন ঘটনাস্থল থেকে বাঁশখালী চলে গিয়েছিল।
এদিকে, এ মামলায় গত ২৫ এপ্রিল চকরিয়া উপজেলার বদরখালী এলাকা থেকে গিয়াস উদ্দিন মুনির (৩২) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। মুনির বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে।
আজ রবিবার দুপরে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চজ্ঞা এ আসামীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। মুনিরকে যেকোনো সময় রিমান্ডের জন্য পুলিশ নিয়ে যাবে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্জয়।
তিনি জানান, আদালতের আদেশে মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামী মাতারবাড়ি এলাকার ট্রলার মালিক বাইট্টা কামাল ও ৪ নম্বর আসামী ট্রলার মাঝি করিম সিকদারের ৫ দিনের রিমান্ড আজ রবিবার শেষ হচ্ছে। সোমবার যেকোনো সময় ওই ২ জনকেও আদালতে প্রেরণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি ট্রলার থেকে গত রবিবার (২৩ এপ্রিল) ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলাপাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে শওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমান গনি (১৭), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫)।
এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে ৪ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৬৪ জনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর খানায় একটি মামলা করেন নিহত ট্রলার মালিক সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম। এই মামলায় এই পর্যন্ত ৫ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।