কক্সবাজারে শেষ হলো সপ্তাহব্যাপী বিচ কার্নিভাল

কক্সবাজার ও রামু প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৩ at ৯:৩২ অপরাহ্ণ

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে শেষ হলো সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল। উৎসবের শেষ দিনে ছিল গ্র্যান্ড সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ জমকালো নানা আয়োজন।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, আজ শেষ দিনে মঞ্চ মাতিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল চিরকুট ও জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রবি চৌধুরী। এছাড়াও ছিল ডিজে শো, আতশবাজি প্রদর্শনী, সেমিনার ও সপ্তাব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ।

‘পর্যটনে পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ’ এ প্রতিপাদ্যে বর্ণিল শোভাযাত্রাসহ উৎসবমুখর নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর এ উৎসব শুরু হয়।

মূলত কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সাত দিনের এ উৎসবের আয়োজন করে। আর এ উৎসব আয়োজনে প্রধান স্পন্সর ছিল দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, “বিশ্ব পর্যটন দিবসকে উপলক্ষ করে কক্সবাজারকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে মূলত আমাদের এ আয়োজন। আমরা আশা করছি, সাত দিনের মেলায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বিচ ম্যারাথন, বিচ বাইক র‌্যালি, ঘুড়ি উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, সার্কাস, মেগা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ যে যে আয়োজনগুলো ছিল সবই পর্যটকদের প্রাণ ছুঁয়েছে।”

এ উৎসবের রূপ ছিল নানা বৈচিত্রে ভরা এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এ সময় যারা কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছে তাদের ভ্রমণ আনন্দে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। আমরা আশা করছি এ আয়োজন অবশ্যই কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”

তবে কক্সবাজারে এত বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হলেও কক্সবাজারের স্থানীয় শিল্পীদের উপেক্ষিত করা হয়েছে এমন অভিযোগ আসছে শিল্পীদের কাছ থেকে।

জেলা সংগীত শিল্পী পরিষদের সভাপতি বশিরুল ইসলাম বলেন, “কক্সবাজার আমাদের সম্পদ। এখানকার সকল উন্নয়নে শিল্পী সংস্কৃতিকর্মীরা সামিল হতে চায় কিন্তু জেলা প্রশাসনের এত বড় আয়োজনে স্থানীয় শিল্পীদের উপেক্ষিত করা হয়েছে। মূলত কমার্শিয়ালি গান করেন এ রকম শিল্পী ছাড়া স্থানীয় কাউকে এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।”

মানসী বড়ুয়া, নাসির উদ্দিন বিপু ও মিনা মল্লিকসহ গুটি কয়েক সিনিয়র শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের সঙ্গে অপমানজনক আচরণ করেছেন আয়োজকরা।

মেলা শেষ হলে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানান বশিরুল ইসলাম।

এবারের বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটকদের জন্য বাড়তি সুযোগ এনে দিয়েছে টানা তিন দিনের ছুটি। টানা ছুটির সুযোগে এ তিন দিন ৫/৬ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে সার্কাস প্রদর্শনী, বীচ বাইক র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, কনসার্ট সহ বিভিন্ন ইভেন্ট পর্যটকদের মুগ্ধতা ছড়িয়েছে।

শেষ দিনে কার্নিভালে দর্শক মাতিয়েছে দেশের বিখ্যাত ব্যান্ড দল চিরকুট, আভাস, সুনামগঞ্জের শাহ আবদুল করিমের দল, কুষ্টিয়ার লালন গীতির দল, সিলেট, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহের পালা গানের দলসহ জনপ্রিয় ব্যান্ড ও সংগীত শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করবেন তিন পার্বত্য জেলা- বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের শিল্পীরা।

কুমিল্লার কোটবাড়ি থেকে আসা পর্যটক শহিদ উদ্দিন বলেন, “গেল দুই দিন ধরে কক্সবাজার অবস্থান করছি। এখানে পর্যটন মেলার আয়োজনগুলো দেখে ভালো লেগেছে। দেশের নামকরা শিল্পীদের গান শুনেছি, রাখাইন নৃত্য দেখেছি। সব মিলিয়ে এবারের কক্সবাজার ভ্রমণটা সফল হয়েছে। তবে হোটেলে যে ছাড় দেওয়া হবে বলে প্রচার করা হয়েছে সেই ছাড় পাইনি।”

ভৈরব থেকে আসা নুরুর জামান বলেন, “কক্সবাজারে আমার ভাই বুট-বাদাম বিক্রি করে। সে বলেছে কক্সবাজারের পর্যটন মেলার কথা। তাই মেলা শুরুর দুই দিন পর থেকে তার বাসায় উঠেছি। মেলার সমস্ত আয়োজন মনের মতো হয়েছে। আজ শেষ দিনে আয়োজন আরো ঝমকালো হয়েছে।”

রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমিরুল করিম খান বলেন, “কক্সবাজারে এমন সময়ে আসলাম প্রতিদিন বউ-বাচ্চা নিয়ে মেলায় এসেছি। মেলা উপলক্ষে রাস্তার পাশে যে স্ট্রিটফুড রয়েছে তাও খেলাম। বউয়ের জন্য হাতে বোনা শাড়ি কিনেছি।”

তিনি বলেন, “মেলার পুরো পরিবেশটা দেখে মনে হয়েছে, দেশের সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এবং পর্যটন খাতে রাজস্ব বাড়াতে পর্যটন এলাকায় এসব মেলার আয়োজন প্রতি বছর করা উচিত। ভ্রমণের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আজ মেলার শেষ সময়টা উপভোগ করে যেতে পারছি না। তবে এরকম মেলা হলে বার বার আসব কক্সবাজারে।”

পর্যটন মেলার সমাপনী উপলক্ষে গত রাতে সাগর পাড়ের নির্মিত মঞ্চের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন।

আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান এবং বসুন্ধরা গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. আবু হেনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী‌তে দেড়শ কেজি রং মেশানো মাছ ধ্বংস
পরবর্তী নিবন্ধব্যাংককে সিয়াম প্যারাগনে গোলাগুলির ঘটনায় নিহত ২