যৌন নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতেই কক্সবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনকে (৪৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হাফেজ আশরাফুল ইসলামকে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এ তথ্য জানায়।
এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “সিসিটিভি’র ফুটেজে শনাক্ত হওয়া আশরাফুল ইসলাম নামের ছেলেটি একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খুব বেশি প্রতিশোধপরায়ণ হয়েই তরুণটি এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করেছে। পরে রাত ১০-১১টার পর শহর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে অনুসরণ করে টেকনাফের হোয়াইক্যং থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সেই সাথে তার দেখানো মতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইল ফোনটি শহরের একটি নালা থেকে এবং সদরের খুরুশকুল থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে।”
আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিনের সাথে আশরাফুলের পরিচয় ঘটে সপ্তাহখানেক আগে সাইফুদ্দিনের চাচাত শ্যালক নয়নের মাধ্যমে। এরপর দুইজনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে এবং তাদের মধ্যে মোবাইল ফোন লেনদেন হয়। গত রবিবার (২০ আগস্ট) সাইফুদ্দিন নিজের মোটরসাইকেলে আশরাফুলকে নিয়ে শহরে ঘোরাঘুরি করে। এরপর বিকালে তারা বাজারঘাটায় গিয়ে মদ ও ফলমূল কিনে সানমুন হোটেলের ২০৮ নম্বর কক্ষে আসেন। এরপর ওই কক্ষে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ সংঘটিত হয় এবং সেই ঘটনা ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর সাইফুদ্দিন আশরাফুলকে নিয়ে হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে যান এবং নিজের মোটরসাইকেলে করে বাজারঘাটায় তাকে নামিয়ে দিয়ে আসেন। এসময় আশরাফুলের হাতে ১শ’ টাকার একটি নোটও দেন সাইফুদ্দিন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এর ঘণ্টাখানেক পর সাইফুদ্দিন ফোন করে আশরাফুলকে আবারো হোটেল কক্ষে ডেকে পাঠান এবং ফের একই কর্মে লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। এসময় আশরাফুল তাকে বাধা দিলে তার গলা চেপে ধরে সাইফুদ্দিন। এক পর্যায়ে আশরাফুল ধাক্কা দিয়ে সাইফুদ্দিনকে ফেলে দেয় এবং তার সাথে থাকা ছুরি নিয়ে উপর্যপুরি আঘাত করে। এ সময় সাইফুদ্দিনের গোঙাানির শব্দ যাতে কক্ষের বাইরে না যায় সেজন্য বালিশ দিয়ে তার মুখ চেপে ধরা হয়। তার প্যান্টের বেল্ট খুলে হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। ঘটনার পর শরীরের রক্ত ধুয়ে-মুছে কক্ষ থেকে বাইরে যাওয়ার পর রক্তের দাগ দেখে আবারও ফিরে আসে আশরাফুল। এরপর ভালো করে হাত-পা ধুয়ে পালিয়ে যায় আশরাফুল। পরদিন সোমবার সকালে সাইফুদ্দিন হত্যার কথা জানা যায়।
নিহত সাইফুদ্দিন (৪৫) শহরের ঘোনারপাড়া ৯ নং ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত আনসার কমাণ্ডার আবুল বশরের ছেলে ও কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম (১৮) কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী ইসলামপুর এলাকার মোহাম্মদ হাশেমের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আজ কক্সবাজার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে।