‘সালাম না দেয়ায়’ সমাজকর্মীকে কক্সবাজার উপজেলা চেয়ারম্যানের মারধর

ভাইরাল ভিডিও দেখুন

রামু প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:৪৮ অপরাহ্ণ

‘সালাম না দেওয়ার অজুহাতে’ এবার কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল প্রকাশ্যে মারধর করেছেন সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন পর্যায়ের এক সমাজকর্মীকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওটির সূত্র ধরে মারধরের শিকার ওই কর্মীকে শনাক্ত করে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ঘটনাটি এক মাস আগের উল্লেখ করে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একজনকে প্রকাশ্যে কিল-ঘুষি-লাথি মারছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল। মারধরের শিকার ব্যক্তি নিজকে রক্ষা করতে নানাভাবে মিনতি করে শোর-চিৎকার করছেন। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা কয়েকজন লোক ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে রক্ষা করতে চেয়েও ব্যর্থ হন।

ভিডিওটিতে বিস্তারিত কিছুই না জানিয়ে লেখা হয়েছে, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদে সমাজসেবা অফিসারকে প্রকাশ্যে মারধর।

ভিডিওটির সূত্র ধরে দফায় দফায় একাধিক ব্যক্তি, সমাজসেবা কার্যালয়ের সদর উপজেলা ও জেলা কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে মারধরের শিকার ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

তারা জানিয়েছে, মারধরের শিকার ব্যক্তি কক্সবাজার সদর উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অধীনে ইউনিয়ন পর্যায়ের একজন কর্মী। মোর্শেদ আলম নামের ওই যুবক কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী, ভারুয়াখালী, পোকখালী ও পিএমখালী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে গত ১৬ আগস্ট দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে।

বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজী নন মারধরের শিকার মোর্শেদ আলম। ঘটনার পর থেকে তিনি যেন এখনো অজানা আতংকে রয়েছেন।

এছাড়াও ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শী, মোর্শেদের কয়েকজন সহকর্মী ও পরিবারের সদস্য প্রকাশ্যে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, মোর্শেদ প্রতিদিনের মতো ১৬ আগস্ট কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণের এক পাশে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ছোটন নামের এক সহকর্মীর সাথে কথা বলছিলেন। এ সময় মোর্শেদের পেছন থেকে এসে পরিষদে প্রবেশ করেন চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল। ছোটন চেয়ারম্যানকে দেখে সালাম জানালেও মোর্শেদ তা দেখেননি।

সালাম না দেয়ার অজুহাতে উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল প্রকাশ্যে মারধর করেন মোর্শেদকে। এতে মোর্শেদের মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়ে যায় যদিও রক্তাক্ত হওয়ার দৃশ্যটি ভিডিওতে নেই। সহকর্মীরা মোর্শেদকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের নথিপত্রে দেখা গেছে, ঘটনার দিন ১৬ আগস্ট বিকাল ৩টার পরই মোর্শেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মোর্শেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, টানা ১০-১২ দিন চিকিৎসা শেষে মোর্শেদ ফিরলেও নানা হুমকির কারণে বিষয়টি নিয়ে কোথাও কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি।

অথচ এ ধরনের একটি মারধরের ঘটনা নানাভাবে শুনেছেন বলে স্বীকার করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া, কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হাসান মাসুদ।

তবে এই দুই কর্মকর্তার দাবি, ঘটনার শিকার ব্যক্তি কোনো অভিযোগ বা মৌখিকভাবে তাদের বিষয়টি স্বীকার করেননি।

কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নিজ পিতাকে বঙ্গবন্ধুর সমতুল্য দাবি করে নানাভাবে আলোচনায় আসেন।

সর্বশেষ গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে তার বড় এক ভাই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে কায়সারুল হক জুয়েলসহ একই পরিবারের ৫ ভাই-বোন দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে একজনকে মারধর করে আবারও আলোচিত-সমালোচিত হলেন কায়সারুল হক জুয়েল।

বিষয়টি নিয়ে আলাপের জন্য কায়সারুল হক জুয়েলের ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে তিনি এক সপ্তাহ ধরে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশীদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ প্রক্রিয়া শুরু
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়নের মহাসড়কে আমাদের গতি এখন অপ্রতিরোধ্য