নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে কক্সবাজারের মানুষ

ঘূর্ণিঝড় মোখা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ মে, ২০২৩ at ১০:২২ অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে কক্সবাজার সাগর তীরের মানুষ। সন্ধ্যা ৬টায় জেলা প্রশাসনের ঘূর্ণিঝড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসেব মতে, প্রায় দেড় লাখ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য লোকজনকে রাতের মধ্যেই নিরাপদে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

আবহাওয়া বিভাগ ঘূর্ণিঝড়ের আশংকায় কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ১০নং মহাবিপদ সংকেত জারি করেছে।

ইতোমধ্যে দুর্যোগের আশংকায় জেলার সব নৌপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচলও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ১১টা থেকে মহেশখালীর দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের সব হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন থেকে কয়েক হাজার মানুষ ট্রলারে করে টেকনাফে চলে এসেছে। যারা আসতে পারেননি তাদের স্থানীয় হোটেল-রিসোর্ট এবং নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের স্থাপনায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।

তবে আজ শনিবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। উপকূলে কিছুটা পানি বাড়লেও সাগর এখনও উত্তাল হয়ে উঠেনি।

শুক্রবার বিকালের বৃষ্টির পর থেকে কক্সবাজারে গরম কমেছে। শনিবার সারাদিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আকাশ মেঘলা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব দেখা না যাওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষন কান্তি দাশ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয়দানের জন্য কক্সবাজারে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬২০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এতে জেলার ৬ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া শহরের ৬৮টি হোটেল-মোটেলকেও আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এ জন্য প্রায় ১০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, কক্সবাজার শহরে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে রান্না করা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সমুদ্র সৈকতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিচকর্মীরা কাজ করছে। এছাড়া শুক্রবার রাত থেকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসার জন্য মাইকিং করছে।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছু দ্দৌজা নয়ন বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ে অবস্থিত ৩৩টি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব শিবিরে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।”

তিনি জানান, এ লক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক ও রেডক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

এদিকে, ১০নং মহাবিপদ সংকেত জারির পর সাগরে মাছ ধরা বন্ধ করে সকল ট্রলার ঘাটে ফিরে এসেছে বলে জানান কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

তিনি জানান, আজ রাতে কক্সবাজারের প্রায় শতভাগ ট্রলার ঘাটে ফিরে এসেছে এবং নিরাপদ পোতাশ্রয়ে আশ্রয় নিয়েছে।কক্সবাজারে প্রায় ৭ হাজার ফিশিং বোট রয়েছে।

অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চলতি মৌসুমের লবণ উৎপাদন মৌসুম শেষ হয়ে গেছে এবং জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত লবণ মাঠগুলোতে উৎপাদিত লবণ নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক ড. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া।

তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকালে বৃষ্টির আগ পর্যন্ত কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন হয়েছে। দেশে লবণ উৎপাদন ইতোমধ্যে ২২ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবান্দরবানে ট্রাক-অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ নিহত ২
পরবর্তী নিবন্ধকক্সবাজারের ৫২৫ কিলোমিটারের মধ্যে মোখা (লাইভ আপডেট দেখুন)