পুলিশ ও র্যাব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদানসহ মামলা মোকদ্দমা দায়েরের হুমকি দিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রের ২ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-৭।
আটকরা হলো ফটিকছড়ি থানার বক্তপুর এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মো. বেলাল হোসেন (৩১) ও তার অন্যতম সহযোগী এবং তথাকথিত দেহরক্ষী মো. ওসমান (৫৩)। ওসমান ভুজপুর থানার পশ্চিম সুয়াবিল এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক বিফ্রিংয়ে এই তথ্য জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।
তিনি জানান, গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় মোহাম্মদ খোরশেদুল আলম নামে এক ব্যক্তিকে নিজেকে এসআই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান সহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা দায়ের করার হুমকি প্রদান করে ২০ হাজার টাকা দাবি করে প্রতারক বেলাল।
তিনি সরল বিশ্বাসে প্রতারকের দেওয়া নম্বরে গত ১৬ আগস্ট রাতে ২০ হাজার ৪০০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে প্রতারক থানার ওসি সেজে পুনরায় তার নিকট টাকা চাইলে খোরশেদুল আলম গত ১৭ আগস্ট সকালে ৩ হাজার ৬০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করে।
ঐদিনই প্রতারক সার্কেল এএসপি সেজে পুনরায় বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে গত ১৭ আগস্ট ২৯ হাজার ৫৮০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন খোরশেদুল আলম। এছাড়া প্রতারক এসপি সেজে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
এভাবে খোরশেদুল আলমের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারক বেলাল সর্বমোট ৫৩ হাজার ৪০ টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতারক পুনরায় র্যাবের অফিসার পরিচয় দিয়ে ফোন করে জানায় মামলাটি বর্তমানে র্যাবের নিকট এসেছে। মামলার বিষয়ে খোঁজখবরের নাম করে তার নিকট পুনরায় টাকা দাবি করা হয়। ঘটনার বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে খোরশেদুল আলম র্যাব-৭, চট্টগ্রামকে অবহিত করেন। এরপর র্যাব-৭ অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায়।
তিনি আরও জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফটিকছড়ি থানার নাজিরহাট বাজার এলাকা থেকে প্রতারক মো. বেলাল হোসেনকে আটক করা হয়।
আটক মো. বেলাল হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে অকপটে স্বীকার করে যে নিজেকে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে খোরশেদুল আলমের নিকট থেকে মোট ৫৩ হাজার ৪০ টাকা আদায় করেছে।
২০২১ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ও র্যাব বাহিনীর সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে একটা প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে বেড়াত এবং বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।
প্রতারক স্থানীয় তথাকথিত অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন চ্যানেল হতে বিভিন্ন ক্রাইম ও মামলার খবর, জমিজমার বিরোধের খবর নিয়ে নিজেকে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে কথা বলত ও টাকা দাবি করত এবং টাকা না দিলে কিংবা দিতে দেরি করলে হুমকি দিত।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ জানান, থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার, মামলার তদন্তকারী অফিসার, পুলিশ, র্যাব, পিবিআই, সিআইডির কোনো অফিসারের নাম গ্রহণ করে মোবাইল ফোনে এমনভাবে কথা বলত যে মামলার বাদি বা তাদের পরিবার বুঝতেই পারত না।
বেলাল নিজে কোনোদিন কারো সঙ্গে দেখা করত না। টাকা নিত বিকাশে এবং বিকাশের দোকানেও যেত না। বিকাশের দোকানকে অন্য নম্বরে সেন্ড করতে বলত।
এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে লোকজনকে প্রতারিত করেছে বেলাল। নিয়মিত প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোনে কথা বলত এবং ফোনের অপর পাশে থাকা ভিকটিমরা তাকে ঊর্ধ্বতন অফিসার বলে মনে করত।
২০২১ সালের মে মাসে সে সর্বপ্রথম প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিকট হতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে।
সর্বপ্রথম সে তার বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনকে বিভিন্ন পুলিশ অফিসার বা র্যাবের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখাত।
তারপর ২০২১ সালের মে মাসে সে একটি মুদির দোকানে সয়াবিন তেলের ডিলার সেজে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
এছাড়া সে থানার ওসি সেজে ইউনিয়ন পরিষদের দফাদারের নিকট থেকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বার পদ প্রার্থীদের মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তাদের নির্বাচনে সহযোগিতা করার কথা বলে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা আদায় করে।
সর্বশেষ রাউজান থানায় একটি শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় তার বাবার কাছে ময়নাতদন্তের ঝামেলা এড়ানোর কথা বলে নির্মমভাবে ৫ হাজার টাকা আদায় করেছে।
গত দেড় বছরে প্রতারণাই ছিল তার একমাত্র আয়ের উৎস এবং পেশা এবং সে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে এরূপ প্রতারণা করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় তাকে হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ।