ঢাকায় মহাসমাবেশ করে সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিতে রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
অপরদিকে, বিএনপি অবস্থান কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করলে তাদের চলার পথই বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আগামীকাল শনিবার (২৯ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপি’র এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকালে ঢাকার নয়া পল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “এই সরকার বেআইনি, অসাংবিধানিক, অবৈধ এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। দফা এক, দাবি এক, পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।”
যে চার জায়গায় অবস্থান নেবে বিএনপি
* নয়াবাজারে বিএনপি অফিসের সামনে
* গাবতলী এস এ খালেক বাসস্ট্যান্ডের সামনে
* যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে দনিয়া কলেজ সংলগ্ন মাঠে
* উত্তরা বিএনএস সেন্টারের উল্টো দিকের রাস্তায়
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “দেশের ক্রান্তিলগ্নে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করতে হয় তরুণদের। আমাদের ছয়শ’ নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৪০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। গত দুই দিনে মহাসমাবেশে যোগ দিতে আসা কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করে কী আমাদের থামানো যাবে? আমরা পুলিশকে, প্রশাসনকে বলতে চাই, আপনারা এই ভয়াবহ একটা দলীয় সরকারের বেআইনি আদেশ-নির্দেশে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না।”
এই আন্দোলনের লক্ষ্য তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সমস্ত দলগুলো, যারা আন্দোলনে থাকবে, তাদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। আজকে আমরা শুধু একা নই। বাইরের দেশগুলো, আন্তর্জাতিক বিশ্ব তারাও বলছে তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বেআইনি গ্রেফতার বন্ধ করুন, যারা কারাগারে আছেন তাদের ছেড়ে দিন। খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন। ভালো চাইলে আমাদের এক দফা দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।”
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার এই সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারাও বক্তৃতা দেন।
পাশাপাশি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি অডিও বক্তব্য প্রচার করা হয় যদিও আইনের দৃষ্টিতে পলাতক থাকায় তার বক্তব্য বিবৃতি প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
মির্জা ফখরুল মহাসমাবেশের ‘চমক’ হিসেবে তারেক রহমান বক্তব্য দেবেন বলে ঘোষণা করেন। সেই বক্তব্যের পর শনিবার ঢাকা মহানগরের সকল প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে সমাবেশ শেষ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যে যুগপৎ আন্দোলন আন্দোলনে রয়েছে, তার অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ হবে। এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।”
সরকার ও প্রশাসনের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আশা করব যে প্রশাসন এই কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে। আমরা এটাও আশা করব, কালকে যে ছুটির দিন আছে এবং পবিত্র আশুরা আজকে রাত থেকে শুরু হবে… আজকে রাতেই শেষ হয়ে যাবে। সেই কারণে সকল দলকে একসঙ্গে রেখে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আমাদের এই কর্মসূচিটা পালন করব… সেটাই হচ্ছে আমাদের আগামীকালের ঘোষণা। প্রশাসন ও সরকার যাতে সহযোগিতা করে এই আশা আমি করছি।”
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপিসহ সমমনা জোট ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকায় আলাদা আলাদাভাবে সমাবেশ করে শুক্রবার।
গত ১২ জুলাই শুরু হওয়া এক দফার আন্দোলনের এটি দ্বিতীয় কর্মসূচি ছিল। এর আগে ১৮ ও ১৯ জুলাই সারাদেশে মহানগর ও জেলায় পদযাত্রা করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।
অপরদিকে, ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে বিএনপি অবস্থান কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করলে তাদের চলার পথই বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ শুক্রবার বিকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দিবে।”
বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচি প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “রাস্তা বন্ধ করবেন, আপনাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দেব। চোখ রাঙাবেন না, দেশী-বিদেশী যারাই চোখ রাঙাবেন তাদের বলে দিচ্ছি, আমাদের শিকড় অনেক গভীরে। চোখ রাঙিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না।”
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, “আপনারা হতাশ হবেন না, কারও চোখ রাঙানোর পরোয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা করেন না।”
আওয়ামী লীগ সংঘাত চায় না জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপির উদ্দেশে বলেন, “কোথায় দাঁড়াবেন, আমরা ছেড়ে দেব। আমরা সঙ্ঘাত চাই না, আমরা শান্তির জন্য এই সমাবেশ করছি। যত লাফালাফি তাফালিং করেন ফখরুল সাহেব, এই তারেক জিয়ার লাফালাফিতে কাজ হবে না। যতই তাফালিং করুন ক্ষমতার ময়ুর সিংহাসন বহুদূরে। রাজনীতির মাঠে আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে হারাতে পারবেন না। আন্দোলনে আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন। আগুন নিয়ে আসবেন, আগুনে হাত পুড়িয়ে দেব, ভাঙচুর করতে আসলে হাত ভেঙে দেব।”
তারেক রহমানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তারেক জিয়া লন্ডন থেকে ফরমায়েশ দিচ্ছে, এখানে ফখরুল-আমীর খসরুরা লাফালাফি করছে। তাদের কথায় নাকি জাতিসংঘ নির্বাচন পরিচালনা করবে। গণভবন তোমার বাবার? জনগণ শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে গণভবনে বসিয়েছে, জনগণ যতদিন চাইবে ততদিন শেখ হাসিনা গণভবনে থাকবেন। তারেক রহমান কিছুই করতে পারবে না। লন্ডনে বসে তারেক রহমান পুলিশকে ধমক দিচ্ছে, প্রশাসনকে ধমক দিচ্ছে, বলছে ফখরুলদের টাকার অভাব হবে না। তোমার বাবা দম্ভ করে বলেছিল, মানি ইজ নো প্রবলেম। কোথায় গেল তোমার বাবা? তুমি তো এবারও তাই বলছ।”
কাদের বলেন, “বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা লুট করে নিয়ে আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে লবিস্ট নিয়োগ করে, কংগ্রেসের কিছু লোকজন দিয়ে জাতিসংঘের অ্যাম্বাসেডরের কাছে চিঠি পাঠায়-জাতিসংঘের আন্ডারে নির্বাচন করতে হবে। রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে পালিয়েছে, সেই তারেক রহমান এখন নেতা। এই তারেককে ধরবে বাংলাদেশের মানুষ। যতই লন্ডন থেকে আস্ফালন করছে ততই মানুষ থেকে দূরে যাচ্ছে তারেক রহমান।”
কারা কারা ঘন ঘন লন্ডন যান, টাকা তুলে দিচ্ছেন তারেকের হাতে, সেই খবরও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নমিনেশনের জন্য টাকা নিয়ে যাচ্ছে, পরে সুবিধা নেয়ার জন্য টাকা দিচ্ছে এই বুঝি ক্ষমতায় এসে যাচ্ছে। যারা আমার মাতৃভূমির টাকা লুট করছে, গণতন্ত্রকে গিলে খাচ্ছে, আমার বঙ্গবন্ধুকে অপমান করছে, তাদের হাতে আমার জন্মভূমির ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারি না।”
সরকারের পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপি’র আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এক দফা খাদে পড়ে গেছে। এই এক দফা কোনোদিন ক্ষমতার স্বাদ পূর্ণ করতে পারবে না।”