প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “সন্ত্রাসীদের যেভাবে শিক্ষা দিতে হয়, সেটাই এবার বিএনপিকে দেওয়া হবে।” গত কয়েক দিনের সংঘাত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে আবারো ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যায়িত করেন তিনি।
ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে তারা এখানে ওখানে চোরা পথে গাড়ি পোড়াচ্ছে। যারা গাড়ি পোড়াচ্ছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা, গ্রেপ্তার করা এবং যথাযথ শাস্তি দেওয়া, আর যে হাত দিয়ে গাড়ি পোড়াবে, আমার তো মনে হয় যার গাড়ি যেখানে পোড়াবে, যদি ধরা পড়ে, ওই গাড়ি পোড়ানো হাত সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে, তাছাড়া শিক্ষা হবে না। তাদের শিক্ষাটা ওইভাবেই করতে হবে। শঠদের সাথে শঠের মতোই করতে হবে। তার আচরণের জন্য ঐরকমই শিক্ষা দিতে হবে।”
গত শনিবার বিএনপি’র সমাবেশ ঘিরে সংঘাতে হত্যা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং তারপর হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।
জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিএনপি-জামায়াত জোট, এরা আসলে যে সন্ত্রাসী এবং বিএনপি যে একটা সন্ত্রাসী দল এটা তারা আবার পুনরায় প্রমাণ করল। কানাডা কোর্ট কিন্তু এ বিষয়টা কয়েকবার বলেছে। এখান থেকে এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে যারা আশ্রয় চেয়েছিল তারা সেখানে কিন্তু পায়নি, সন্ত্রাসী দল হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। তাদের মধ্যে কোনো মনুষ্যত্ববোধ নেই। তাদের সাথে আমরা যতই ভালো ব্যবহার করি না কেন, তাদের কখনোই স্বভাব বদলাবে না। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ তারা বিশ্বাস করে কারণ অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে ক্ষমতা দখলকারীর হাতেই তাদের জন্ম। এটাই তারা ভালো বোঝে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচনের ব্যপারে আমার যেটা ধারণা, এরা তো নির্বাচন চায় না, এরা একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাস যদি আপনারা দেখেন, ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আজকে ২০২৩ সাল, এই বাংলাদেশ তো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। অস্বীকার করতে পারবেন না। আজকে আনাদের কাছে কেউ ভিক্ষা চাইতে আসবে না। প্রত্যেকের খাবারের ব্যবস্থা ভূমিহীনদের ভূমির ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা। কেউ কাজ করলেই কিন্তু ক্ষেতে পায়, অন্তত সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি। তারা নানাভাবে, আসলে মানুষকে কষ্ট দেয়াটাই তাদের চরিত্র। এখানে আমার বলার কিছু নেই। আন্তর্জাতিকভাবে সবাই আমাদের প্রসংশা করে, একমাত্র দুঃখে মরে যায় এই বিএনপি আর জামায়াত জোট, এরাই।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী সংগঠন, সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেই শিক্ষাটাই এখন আমাদের দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। সেটাই আমরা দেব। কারণ এদের জন্য এই দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না।”
২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের টানা হরতাল-অবরোধে যে সহিংসতা হয়েছিল, তার সঙ্গে গত কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহের তুলনা করে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, যারা এসব সহিংসতা করছে, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে কি না।
উত্তরে সরকারপ্রধান বলেন, “হিন্দিতে একটা কথা আছে না, শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ… । যে শঠ, তার সাথে শঠের মতোই আচরণ করতে হবে। আর যার যার নিজের কাজ নিজেরই। যারা জ্ঞানী, তারা নিজের কাজ নিজেই করে যায়। শঠে শাঠ্যং সমাচরেৎ, আমার কথা হচ্ছে সেটাই।”
যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে, তারা সেসব বন্ধ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বন্ধ না করলে পরে এর পরিণতি তাদের ভোগ করতে হবে। এবার এমনি এমনি যেতে দেব না। নির্বাচন এভাবে তারা থামাতে পারবে না। ২০১৩ সালেও পারেনি, ১৮ তেও পরেনি এবারও পারবে না। ইনশাল্লাহ নির্বাচন যথা সময়েই হবে, তারা পারবে না। তবে জনগণ আমাদের সাথে আছে। কোনো জনগণ তাদের সাথে নাই। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না, রাজনীতি তো জনগণের জন্য। এটা তারা ভুলে যায়, তাদের তো অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতায় আসার অভ্যাস।”
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যেদিন চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলে উদ্বোধন করলেন, সেদিনই তারা পুলিশের ওপর ‘হামলা’ করেছে, মানুষ ‘খুন’ করেছে।
সাংবাদিকের ওপর ‘কীসের রাগ’, সেই প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, “সাংবাদিকদের ওপর যেভাবে তারা চড়াও হলো, কেন তাদের ওপর হঠাৎ… সাংবাদিকরা তো তাদের খুব ভালো ভালো নিউজ দিচ্ছিল। টকশোতেও ভালো ভালো কথা আর সরকারের দোষটাই বেশি দেখে, তাহলে সাংবাদিকদের ওপর এত রাগটা কেন? সেটা আমি বুঝতে পারলাম না। প্রত্যেকটা টেলিভিশন প্রাইভেট সেক্টরে আমিই দিয়েছি, সব জায়গায় তাদের নিউজটাই কিন্তু সবার আগে বরং আমার নিউজটাই সবার পরে। কোনো কোনো টেলিভিশনে আমি চার পাঁচ নম্বরে থাকি। তারপরও রাগটা কেন হলো?”
দশম সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০১৩ সালে তারা এই একই রকম অগ্নি সন্ত্রাস করে, ’১৪-‘১৫ তিনটা বছর ধরে তারা এই অগ্নি সন্ত্রাস করে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত বাস মালিক, সবাইকে আমরা আর্থিক সহযোগিতা দিতাম, যাতে তাদের বাসটা চালাতে পারে। যারা আহত নিহত, তাদের আমরা আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। ঠিক একইভাবে পুলিশকে আঘাত করে করে সেই রাজশাহীতে পুলিশকে মারল, গাইবান্ধাতে মারল। সারা বাংলাদেশেই মারল, সেই সময় ২৯ জন পুলিশকে মারল, পাঁচশয়ের উপর স্কুল ঘর পুড়িয়েছিল। ৩৮২৫টি গাড়ি পুড়িয়ে ছিল, ৩ হাজার মানুষকে পুড়িয়েছিল। ৫০০ মানুষ পুড়েই মারা যায়। এখন অনেকে পোড়া অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।”