গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধারে’ ১০ দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকার বাড্ডা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার পথ ‘নীরব পথযাত্রা’ করেছে বিএনপি।
আজ শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিকাল ৪টার দিকে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে এসে শেষ হয়। নেতাকর্মীদের হাতে ছিল সরকার পদত্যাগ, দ্রব্যের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদী স্লোগান সম্বলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা কিন্তু তাদের কণ্ঠে ছিল না কোনো স্লোগান।
এ পথযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকে আমরা এক নতুন আন্দোলন শুরু করলাম। এই সংগ্রামের মধ্যে ঢাকা শহরে এই নীরব যাত্রার মধ্য দিয়ে, এই নীরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব। আসুন, এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এই সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই- আর কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবার ক্ষমতা দিন।”
পথযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। পরে মহাসচিব নেতাদের নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন।
পথযাত্রায় অংশ নেন মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, বাবুল আহমেদ, আবদুল আলিম নকি, এ জি এম শামসুল হক, মোনায়েম মুন্না, এসএস জিলানি, রাজিব আহসান, জাকির হোসেন রোকন, আবদুর রহিম, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।
ঢাকা মহানগর বিএনপি রাজধানীতে যে চারটি স্থানে পদযাত্রা পালনের ঘোষণা দিয়েছে, তার প্রথম কর্মসূচি এটিই। সোমবার হবে যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর, মঙ্গলবার হবে গাবতলী টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং বুধবার পদযাত্রা হবে মুগদা থেকে মালিবাগ। সবগুলো কর্মসূচি শুরু হবে দুপুর ২টায়।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমাদের চালের দাম বেড়ে গেছে, আমাদের ডালের দাম বাড়ছে, আমাদের ডিমের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়ে গেছে। এই যে রিকশা-শ্রমিক ভাইয়েরা, কারখানার শ্রমিক ভাইয়েরা তারা এখন জীবন-যাপন করতে পারছে না। তারা চাল-ডাল-তেল লবণ কিনতে পারছে না। বাচ্চাদের ডিম দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেফতার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সমস্ত বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। সমগ্র দেশকে এরা (সরকার) একটা কারাগারে পরিণত করেছে। আমরা কী এটা মেনে নেব?”
বিএনপি মহাসচিব প্রশ্ন রেখে বলেন, “আমাদের ভোটের অধিকার কি আছে? আমাদের ভোটের অধিকার নাই। সেই অধিকার আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদেরকে কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি এদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন-লড়াই করেছেন, এখনও যিনি গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তাকে মুক্তি করবার জন্য। আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি মিথ্যা মামলায় সুদূরে নির্বাসিত হয়ে আছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা তাকে প্রত্যাহার করতে হবে, যারা কারাগারে আছেন তাদেরকে মুক্ত করতে হবে, দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। …এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে…।”
ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে পথযাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখে নেতা-কর্মীরা। তবে পথযাত্রা শুরু হলে একদিকের সড়কের নেতা-কর্মীদের ‘নীরব পদযাত্রায়’ ব্যাপক যানজট সৃষ্ট হয়। অনেক যাত্রী পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যায়। এ কর্মসূচি ঘিরে বাড্ডা-মালিবাগ সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।