ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এর ঘোর বিরোধী বিএনপি এখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতেই গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি; ফলে ভোট কাগজের ব্যালটে হলেও তাদের তা নিয়ে কোনো ‘আগ্রহ নেই’।
আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ব্যালট পেপারে হবে বলে ইসি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এমনটাই জানালেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি আজ সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনে লেডিস ক্লাবে রাজনীতিকদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বলেন, “আজকে নাকি নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে যে, ইভিএমে নয়, ব্যালটেই নির্বাচন হবে। এই বিষয়ে একজন সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করলেন। আমি তাকে বলেছি যে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের এতটুকু আগ্রহ নেই।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএম-এর পক্ষে হলেও বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম-এর বিরোধিতা ছিল বিএনপি’র। তাদের ভাষায়, এটা ভোট ‘কারচুপির’ যন্ত্র।
নির্বাচন কমিশন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাইলে তখনও বিএনপি নেতারা বলছিলেন, ইসি আবার একটি ‘কারচুপির’ নির্বাচন করতে চাইছে।
ইভিএম মেরামত এবং কেনায় অর্থ না পাওয়ার পর গতকাল রবিবার ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এক বছরের মধ্যে যে সংসদ নির্বাচন হবে তা সম্পূর্ণ ব্যালট পেপারে হবে।
ইসি’র এই সিদ্ধান্তেও বিএনপি’র অবস্থানের হেরফের হচ্ছে না জানিয়ে ফখরুল বলেন, “আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে আজকে জাতির যে সংকট, সেই সংকট হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ে কোন সরকার থাকবে, কী ধরনের সরকার থাকবে সেটাই প্রধান সংকট। সেই কারণে আজকে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। আমাদের যে মূল লক্ষ্য ছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে, যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের (লক্ষ্য), সেই জায়গা থেকে আমরা বহু দূর সরে এসেছি।”
সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এই দাবিতে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত। আমরা বিশ্বাস করি যে এদেশের জনগণ কখনোই কোনো একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। বরাবর বাংলাদেশের বীর জনগণ তাদের অধিকারের জন্য, তাদের স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে এবং সফল হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আজকে বাংলাদেশের মানুষ যে সংগ্রাম শুরু করেছে, আমরা বিশ্বাস করি, সেই সংগ্রামে দেশের সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি এবং সকল মানুষ, তাদের অধিকার আদায়ে শরিক হবেন এবং তাদের অধিকার আদায় করে নেবেন।”
সরকারের নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে গেছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে সারা দেশে একটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। আমরা শুধু বিএনপি’র কথা বলছি না, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছি না; সাধারণ মানুষও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, নওগাঁয় একজন নারীকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে ৩৬ ঘণ্টা পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেওয়া হলো, দেখলাম সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো।”
বিএনপি’র এই ইফতারে ১৬ বছর ধরে অংশ নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা। আজকের ইফতারে দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম।
এছাড়া এলডিপির অলি আহমেদ, জেএসডির আসম আবদুর রব, তানিয়া রব, গণফোরামের মোস্তফা মোহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ফোরকান ইব্রাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, বাংলাদেশে এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নুরুল আমিন বেপারী, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এনডিপির আবু তাহের, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মণ্ডল, সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, সাম্যবাদী দলের নুরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ইফতারে অংশ নেন।